মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পাঁচদিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রাতে জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে ঝটিকা সফর করেছেন।
এ সময় তিনি আহত ও নিহতদের পরিবারের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করারও নির্দেশনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে রোববার রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছে অধ্যাপক ইউনূস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছ থেকে পরিস্থিতি শোনেন এবং আহতদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
এতে বলা হয়, ‘অধ্যাপক নাসির জানান, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীদের আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।’

‘তিনি জানান, সবার সম্মিলিত মূল্যায়নে বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪ জন ক্রিটিক্যাল, ৯ জন সিভিয়ার এবং ২৩ জন ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরির রোগী আছেন। এই মূল্যায়ন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।’
ওই বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ অফিস সহকারী মাসুমা বেগম (৩২) শনিবার সকালে মারা গেছেন। এর আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে মারা যান স্কুলটির সপ্তম শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান (১৩)। এ নিয়ে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৫-এ।
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৩৮ জন, যাদের মধ্যে সংকটাপন্ন ৩ জনে।
গত ২১ জুলাই দুপুর ১টার কিছু পরে বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনায় এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
এমন আবহে প্রধান উপদেষ্টা বার্ন ইন্সটিটিউট পরিদর্শন করলেন।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসার জন্যে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, ওষুধ বা অন্যকিছুর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না জানতে চান।’
‘পরিচালক বলেন, এই মুহুর্তে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল কিছু সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে যে দুয়েকটি সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল সেগুলো সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদল সাথে করে নিয়ে এসেছেন।’
‘প্রধান উপদেষ্টা হতাহতের বিস্তারিত জানতে চাইলে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হাসপাতালগুলোতে দগ্ধ রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসকরা অতিদ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রায় সবাইকে বার্ন ইন্সষ্টিটিউটে এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। চিকিৎসক, নার্সসহ সকল সেবাদানকারীরা প্রস্তুত ছিলেন এবং একসাথে জরুরী বিভাগে আগত প্রায় ৩০ জন দগ্ধ রোগীকে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হয়েছেন।’
‘তিনি আরও জানান, প্রায় ১০টি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে রোগীদের দ্রুত স্থানান্তরিত করার কারণে প্রথমদিকে নিহত ও আহত রোগীর সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ ছিল যেগুলো ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়েছে, যার ফলে কিছু সময় লেগেছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘অধ্যাপক সায়েদুর জানান, রোগীদের স্থানান্তরের সময়ে আম্বুলেন্সের অভাব প্রকটভাবে বোঝা গেছে। এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের জরুরী স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে।’
‘প্রধান উপদেষ্টা অবিলম্বে এবিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।’
‘এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতে ও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিংয়ের প্রতি জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন তিনি। এ কার্যক্রমে সকল নিহতের পরিবার, আহত ও আহতের পরিবার এবং মাইলষ্টোন স্কুলের প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘এর পাশাপাশি, দগ্ধ রোগীদের নিকটাত্মীয়দের হাসপাতালে অবস্থানের সময়ে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে পরিচালককে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।’

‘তিনি বলেন, “রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
‘বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্সসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে, বিদেশ থেকে যারা এই বিপদের সময়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাড়িয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।’
‘হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।’
‘পরিচালক তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুসারে রোগীদের “মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের” সুপারিশ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। “সর্বোত্তম সেবা” নিশ্চিত করতে দেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে,’ যোগ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।