বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সামনে নতুন দিগন্ত। ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপ খেলতে যাচ্ছে লাল-সবুজের মেয়েরা। টুর্নামেন্ট হবে আগামী বছরের মার্চে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। আর সেই লক্ষ্যেই একের পর এক বড় উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
সাফ আর বাছাইয়ের সীমানা পেরিয়ে এবার বাংলাদেশের মেয়েরা নাম লেখাচ্ছে এশিয়ার সেরা মঞ্চে। যার ফলে, উন্নত মানের প্রস্তুতির জন্য বিদেশি কোচিং স্টাফ আনছে বাফুফে। নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছেন, গোলরক্ষক কোচ, নারী সহকারী কোচ এবং ফিজিক্যাল ট্রেনার—এই তিনটি পজিশনে বিদেশি নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি এক মাস আগেই সভাপতির কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রোফাইল খুঁজে দেখতে। ইতোমধ্যে একজন ট্রেনারের সিভিও পৌঁছে গেছে সভাপতির টেবিলে।’
তবে এর মানে এই নয় যে পুরোনোদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। বরং পুরোনো কোচদের সাথেই যুক্ত হবেন নতুন বিদেশিরা।
অন্যদিকে, ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নারীদের ঘরোয়া লিগ। তবে লিগ চলাকালীন নারী ফুটবলারদের ক্লাব ক্যাম্পে নয়, থাকতে হবে ফেডারেশনের ক্যাম্পেই। কিরণ বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে লিগ শুরু হলেও খেলোয়াড়দের ফেডারেশন ক্যাম্পেই থাকতে হবে। কারণ সামনে বিশাল লক্ষ্য।’
এশিয়ান কাপে যাওয়ার আগে দলকে মানিয়ে নিতে হবে আন্তর্জাতিক মানের আবহে। তাই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোরিয়া, জাপান ও স্পেনের মতো দেশের সাথে কথা বলছে বাফুফে। যদিও দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা নিজেই ইউরোপে ক্যাম্প করবে। ফলে তাদের সঙ্গে খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কিরণ বলেন, ‘জাপানের সাথে কিছুটা কথা হয়েছে, তারা এখনো নিশ্চিত কিছু জানায়নি। এছাড়া আমি স্পেনের সাথেও যোগাযোগ করবো।’
এই প্রস্তুতির মাঝেই ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো দমে অনুশীলনে নামছে নারী দল। চলবে টানা ৬ মাস। কোচ পিটার বাটলার সৌদি আরবে ক্যাম্প করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে সেইভাবেই।
গ্রুপে পড়েছে এশিয়ান কাপে ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন চীন, ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া এবং শক্তিশালী উজবেকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রুপকে বলা হচ্ছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’।
তবুও কিরণ আশাবাদী, ‘আমরা জানি চীন বা উত্তর কোরিয়ার সাথে নিয়মিত খেলার সুযোগ মেলে না। এবার সেই সুযোগ এসেছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের আন্তর্জাতিক মানে অভিজ্ঞ করে তুলতে চাই। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে জেতার লক্ষ্য নিয়েই আমরা অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছি।’
যত কঠোর প্রস্তুতি তত সফলতা—এই নীতিতেই এগোচ্ছে ফেডারেশন। আগামী ছয় মাসে অন্তত ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যেই থাকবে ক্যাম্প ও প্রস্তুতি ম্যাচ। ‘আমরা বসে নেই, প্রতিটি দিন প্ল্যান করে এগোচ্ছি। আশা করছি অস্ট্রেলিয়ায় খেলার আগেই মেয়েরা মানিয়ে নিতে পারবে,’—বলেছেন কিরণ।
সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রতিপক্ষ ভয়ংকর। তবুও ইতিহাস গড়ে যে স্বপ্ন শুরু করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল, তা বাস্তবে রূপ দিতে চাইছে বাফুফে—দ্রুত, পরিকল্পিত ও দৃঢ়ভাবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।