রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা মানেই যেন বিশৃঙ্খলার আকর। গলি থেকে রাজপথ– ভোর থেকে গভীর রাত– দীর্ঘতর যানজট, আর অশেষ নিত্য দুর্ভোগ বাসিন্দারা যেন মেনেই নিয়েছিলেন।
তবে এসব নাগরিক দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশের গুচ্ছ পরিকল্পনা ও সক্রিয় উদ্যোগে সেখানে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। বেড়িবাঁধ সিগন্যাল বন্ধ, ইউটার্ন চালু, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং রাস্তা সংস্কারের সমন্বিত প্রয়াসে এখন দূর হয়েছে যানজটের নিত্য ভোগান্তি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন লাখো নাগরিক।
যেভাবে এলো বদল
ট্রাফিক পুলিশের মূল কৌশল ছিল– বেড়িবাঁধ সিগন্যাল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া। এর পরিবর্তে ইউটার্ন ব্যবস্থা, যা গাবতলী থেকে বাবুবাজারমুখী যানবাহন এবং ময়ূরভিলা থেকে বাবুবাজার থেকে গাবতলীমুখী যানবাহন লাউতলা থেকে ইউটার্ন নিতে পারছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও বসিলার মধ্যে চলছে সরাসরি যান।
এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, বিভিন্ন বাস পরিবহনের স্ট্যান্ড ও রাস্তা দখলকারী শতাধিক অবৈধ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে রাস্তা হয়েছে প্রশস্ত।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) খনন করা রাস্তা ইটের খোয়া ও রাবিশ দিয়ে ভরাট, উঁচু-নিচু রাস্তা লেভেলিং এবং বেড়িবাঁধ কালভার্ট রোড মেরামত করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আসলাম সাগর টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, বেড়িবাঁধ সিগন্যাল বন্ধ করে ইউটার্ন চালু করায় অনেকটাই কমেছে যানজট। পাশাপাশি বসিলা-গাবতলী-রায়েরবাজার সংযোগ সড়কে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী মিড আইল্যান্ড, যা সড়কে লেন শৃঙ্খলা এনেছে।
মোহাম্মদপুর জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সড়কে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সকল ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে নিরলস কাজ করেছি।’
এলাকাবাসীর ভাষ্য
বসিলা এলাকায় বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী মারুফ হাসান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পার হতে আধাঘণ্টা লাগত। এখন গাড়ি একবারও থামে না। যানজট থেকে যে পরিমাণ ভোগান্তি কমেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।
বছর দুয়েক ধরে বসিলার লাবণীতে বসবাসকারী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘কী যে একটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো! একটা সময় চিন্তা করেছিলাম এলাকা পরিবর্তন করব। এখন কিন্তু কোনো প্রকার দুর্ভোগ নেই। সহজেই যাতায়াত করতে পারছি।’
‘কিন্তু বসিলার দিকে যেতে ইউটার্নের একটু সামনে হাতের বাম পাশে রাস্তা আটকে কিছু মানুষ ইট বালির ব্যবসা করেন। তাদের তুলে দিলে রাস্তাটি আরো প্রশস্ত হবে,’ যোগ করেন তিনি।
সুফল মিলছে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরেও
তেজগাঁও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানায়, ‘বাংলাদেশ আই হাসপাতালের’ সামনে ধানমন্ডি ২৭ এর পশ্চিমে একটি বাম লেন তৈরি করা হয়েছে। ফলে বিরতিহীনভাবে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের (পুরনো) পূর্ব থেকে আসা যানবাহন বাম লেন ধরে সাত মসজিদ রোড হয়ে ইউটার্ন নিয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে পারছে, তাদের কোনো সিগন্যালে পড়তে হচ্ছে না। ফলে এখন তিনটির বদলে যানগুলোকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে মাত্র দুটি সিগন্যাল।
একই সঙ্গে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত মসজিদ এবং উল্টোপথে যাতায়াত সহজ হয়েছে, যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আরো যা আছে পরিকল্পনায়
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার (এডিসি) তানিয়া সুলতানা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ দোকানদার ও হকারদের বারবার ফিরে আসা, ইজিবাইক ও সিএনজি চালকদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ, সড়কে স্থায়ী কার্পেটিং না থাকায় ধুলো ও কাদার সমস্যা হয়। বিষয়গুলো যদি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বা অভিযান পরিচালনা করা যায় তাহলে যানজট সমস্যা কমবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহজ হবে।’
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মোহাম্মদপুর, বসিলা ও ধানমন্ডি ২৭ এর এই যাদুকরী পরিবর্তন প্রমাণ করে, সদিচ্ছা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ থাকলে সীমিত সম্পদেও রাজধানীর যানজট হ্রাস করা সম্ভব। ট্রাফিক পুলিশের এই স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল উদ্যোগ ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে। একই সঙ্গে শহরের অন্যান্য যানজটপ্রবণ এলাকার জন্য হয়ে উঠেছে একটি অনুকরণীয় মডেল।’
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে বেশ কিছু বিষয় জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে স্থায়ী কার্পেটিং ও প্রকৃত মিড আইল্যান্ড ও ইউটার্ন নির্মাণ করতে হবে। সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও দখল রোধে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি সবার সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে।’