ফেনীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। নদীর পানি কিছুটা কমলেও ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, পরশুরামে ১২টি ও ফুলগাজীতে ৯টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীতে ১১টি, কহুয়া নদীতে ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীতে ৪টি ভাঙন চিহ্নিত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফরমার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর একটি বড় অংশে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন গ্রামে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে পড়ছে এবং অনেক সড়ক পানির নিচে চলে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
ফুলগাজীর বাসিন্দারা জানান, ‘গলা পানি ডিঙিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল কাজ করছে না। কেউ এখনো খাবার বা সহায়তা নিয়ে আসেনি।’
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি কমলেও ভাঙনের কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।’
ছাগলনাইয়ার ইউএনও সুবল চাকমা জানান, ‘আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছি। ইতোমধ্যে আটটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় স্রোত বেড়ে পানি ঢুকে পড়ে।’
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চার উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্যোগে পড়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে প্রায় সাত হাজার মানুষকে। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে।’