আটকের ১১ মাস পর প্রথমবারের মতো ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এক শুনানির সময় কথা বলেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বুধবার দুপুরে বিচারক আদালত কক্ষে প্রবেশ করলে, দীপু মনি মাথা নিচু করে আসামির ডকে বসে ছিলেন এবং উঠে বিচারককে সালাম জানান।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম আদালতকে জানান, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দীপু মনি বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানান।
এ সময় বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি চেয়ে ডিপু মনি বলেন, ‘মাননীয় বিচারক, আমি ১১ মাস ধরে কারাগারে। একটি পত্রিকায় পড়েছি যে আমার ২৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অসত্য।’
তিনি দাবি করেন, তিনি নিয়মিত করদাতা এবং ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের সব হিসাব যথাযথভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। ‘২৮টি অ্যাকাউন্টের দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন,’ বলেন তিনি। আমার মাত্র ছয়টি অ্যাকাউন্ট আছে, তার মধ্যে দুটি নিষ্ক্রিয়।
সাবেক এই মন্ত্রী মামলার নথি ও আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি, ‘আমার বিরুদ্ধে ৭০টি মামলা রয়েছে, কিন্তু ১১ মাসে মাত্র দুইবার আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। আমি অন্ধকারে রাখা হচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।’
‘ভালো নাম করতে সারা জীবন লেগে যায়, কিন্তু সেটা নষ্ট হতে মাত্র দুই মিনিট লাগে। আমি আমার মামলা লড়তে চাই, আর তার জন্য তথ্য দরকার। তথ্যই আমার শক্তি,’ যোগ করেন তিনি।
তার আইনজীবীরাও এই অভিযোগের প্রতি সহমত জানিয়ে বলেন, তারা মামলার নথিপত্র পাননি এবং নিয়মিত জেল সাক্ষাতের সুযোগও পাচ্ছেন না।
বিচারক এ বিষয়ে বলেন, ‘তা হওয়া উচিত নয়’ এবং আইনি অধিকার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
৪৫ মিনিটের শুনানি শেষে আদালত মানি লন্ডারিং মামলায় ডিপু মনিকে গ্রেপ্তার দেখানোর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করেন।
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের কিছু আগে তাকে কারাভ্যানে করে কাশিমপুর নারী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় তিনি মাথা নিচু করে চুপচাপ একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন।
তার আইনজীবী ফয়সাল গাজী বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রথম তিনি আদালতে কথা বলেছেন।’
এদিকে দীপু মনির অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর নারী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কাওয়ালিন নাহার বলেন, ‘যে কোনো বন্দী সঠিক প্রমাণসহ আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাযন। দীপু মনির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই।’