অক্টোবরে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সামনে রেখে প্রস্তুতির শেষ ধাপটা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সেই পরীক্ষার জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নেপালকে। ৬ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল।
এই ম্যাচটা শুধু একটি প্রীতি ম্যাচ নয়, বরং বাস্তবে অনেক বড় অর্থ বহন করছে। কারণ হংকংয়ের বিপক্ষে অক্টোবরে নামার আগে এটিই বাংলাদেশ দলের জন্য মূল প্রস্তুতি। ক্যাম্পে দীর্ঘ অনুশীলন, কিছু ছোটখাটো প্রস্তুতি ম্যাচ সবকিছুর ফল মাপা হবে এই নেপাল সফর দিয়েই।
বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছেন কারণ প্রায় ২০ দিন ধরে ঢাকায় অনুশীলন চালিয়ে গেছেন খেলোয়াড়রা। যদিও দলের একাংশ বর্তমানে ভিয়েতনামে অনূর্ধ্ব-২৩ এএফসি বাছাইয়ে ব্যস্ত। এছাড়া মূল স্কোয়াডের কিছু বড় নাম যেমন হামজা চৌধুরী, শমিত শোম কিংবা ফাহামিদুল ইসলাম থাকছেন না। তা সত্ত্বেও কোচ মনে করেন দলকে প্রতিযোগিতামূলক রাখার মতো যথেষ্ট শক্তি আছে। তার ভাষায়, ‘এটা কোনো বি দল নয়। যারা আছেন তাদের নিয়েই আমরা শক্তিশালী পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’
বাংলাদেশের জন্য নেপালের মাটিতে খেলা বরাবরই কঠিন হয়ে এসেছে। সর্বশেষ জয় দেখতে হয়েছে ২০১৩ সালে। এর পর থেকে কাঠমান্ডুর মাঠে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হাসি ফোটেনি লাল-সবুজ শিবিরে। নেপালের মাটিতে শেষ ম্যাচের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না জামাল ভূঁইয়াদের। সেটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন ক্যাবরেরা। তবে তিনি মনে করেন এবার দলটা আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিপক্ক এবং এই দলকে হারানোর সক্ষমতা আছে বাংলাদেশি ফুটবলারদের।
কোচ ক্যাবরেরা ঢাকায় ক্যাম্পের সময় বিভিন্ন কৌশলগত পরীক্ষা করেছেন। নেপালের বিপক্ষে কোন কৌশল ব্যবহার করা হবে সেটি নির্ভর করবে মাঠ ও প্রতিপক্ষের অবস্থার ওপর। তবে নিশ্চিতভাবেই তিনি চান দল যেন ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। সিঙ্গাপুর ম্যাচে পাওয়া হতাশার অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে তিনি আরও গোছানো ফুটবল চান।
এদিকে দলে তরুণ খেলোয়াড়দের জন্যও বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি মানে মাঠে এখন নতুনদের সামনে নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ। ভালো খেললে ভবিষ্যতে জাতীয় দলে জায়গা পাকাপোক্ত করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও ম্যাচটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি বলেছেন, ‘নেপালের এই দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য বেশ জরুরি। অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে নামার আগে এখানেই বোঝা যাবে আমরা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তার কথায় স্পষ্ট, দলের লক্ষ্য শুধু নেপালকে হারানো নয়, বরং নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা স্পষ্টভাবে চিনে নেওয়া।
অন্যদিকে নেপালও সমান গুরুত্ব দিয়ে ম্যাচটিকে দেখছে। তারাও অক্টোবরে ভিয়েতনামের বিপক্ষে নামবে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে। নিজেদের ঝালিয়ে নিতে এবং পূর্ণ শক্তির পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। নেপালের দলে বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন যারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন। দুই দেশের ফুটবলে সেই যোগসূত্র ম্যাচটিকে বাড়তি মাত্রা দিচ্ছে।
ঢাকার মাঠে খেলার সুযোগ সীমিত। তাই বিদেশের মাটিতে গিয়ে বড় লড়াই খেলতে পারা বাংলাদেশ দলের জন্য একধরনের বাস্তব পরীক্ষা। তরুণদের জন্যও এটি হতে যাচ্ছে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ।
সবকিছু মিলিয়ে ৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ শুধু একটি প্রীতি ম্যাচ নয়। এটি হলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার লড়াই, নতুনদের পরীক্ষা এবং অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে শেষ মহড়া। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে তাই আরেকটি ভিন্ন আবহে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।