নুরাল পাগলের দরবারে ‘তৌহিদী জনতার’ আগুন, পোড়ানো হলো মরদেহ

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে ‘তৌহিদী জনতা’। এ সময় নুরাল পাগলের ভক্তদের সঙ্গে ‘তৌহিদী জনতার’ সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন।

এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গোয়ালন্দ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসময় আহত হন ছয় পুলিশ সদস্য।

পুলিশ ও স্থানীয় জনতা জানিয়েছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরীফ। ৮০র দশকের শেষের দিকে নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়েন। কিছুদিন পর তিনি আবার এলাকায় ফিরে দরবার শরীফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।

গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান নুরাল পাগল। পরে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে তাকে দাফন করা হয়। কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় তার কবর। এরপরই তা নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। ‘তৌহিদী জনতার’ আন্দোলনের মুখে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ‘তৌহিদি জনতা’ ও নুরাল পাগলের পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ‘তৌহিদী জনতা’ কবর নিচে না নামানো হলে ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ‘তৌহিদী জনতা’। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলের দরবারে।

এসময় পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের দরবারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ের ওপর নিয়ে পুড়িয়ে দেয় ‘তৌহিদী জনতা’।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলে তাদের ওপরেও চড়াও হয় ‘তৌহিদী জনতা’।

হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীবসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা। তারাও এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *