বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা উচিত, যাতে জনগণের রাষ্ট্রের ওপর মালিকানা পুনঃস্থাপন করা যায়।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ওপর শর্ত আরোপ করে, দাবি পূর্ণ না হলে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দেওয়া, শুধু অসাংবিধানিক মনোভাবকেই চিরস্থায়ী করবে।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জনঅধিকার পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আমিন খসরু বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে শুধুমাত্র জনগণকে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত, অন্য কোনো দাবি নির্বাচন শর্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা মনে করেন যে তাদের দাবি পূর্ণ না হলে নির্বাচন হতে পারে না, তারা সেই মানসিকতার অংশ, যা শেখ হাসিনা রেখে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের সংগ্রাম এবং পূর্ববর্তী প্রতিবাদগুলো শুধু দলীয় স্বার্থের জন্য ছিল না, বরং সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ছিল।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বহু মানুষ তাদের জীবন, জীবিকা হারিয়েছে এবং কিছু মানুষ বছরের পর বছর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে দেশের বাইরে পালিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছিল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের যৌথ অর্জন।’
বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি প্রসঙ্গে খসরু বলেন, ‘মতপার্থক্য গণতন্ত্রের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দলের নিজস্ব দর্শন ও কর্মসূচি থাকবে। যেখানে ঐক্য সম্ভব, সেখানে তা স্বাগত, তবে এর বাইরে, প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে তাদের ম্যানিফেস্টো উপস্থাপন করতে হবে এবং সংসদে তাদের দাবি তুলে ধরতে হবে। নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য মতপার্থক্য ও অন্তর্ভুক্তি সম্মান করা জরুরি।’
আমি খসরু বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের তদারকি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।’
‘যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে—মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি, প্রেসার গ্রুপ, একাডেমিক এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও প্রশ্ন করবেন। আমাদের অবশ্যই স্বাধীন চিন্তার স্থান নিশ্চিত করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিরোধী মতপ্রকাশের অধিকার দেওয়া প্রয়োজন। আর না হলে, বাংলাদেশ একটি “সংঘর্ষপূর্ণ জাতি” হয়ে যাবে, যা শুধুমাত্র সংশোধিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া দ্বারা অগ্রসর হতে পারে।’
আমির খসরু বলেন, ‘গণতন্ত্র শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতিতেও থাকতে হবে। সকল নাগরিককে কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। মানুষ তাদের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহারের জন্য জবাবদিহি চাইবে এবং সেই ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বত্বাধিকার ও দায়বদ্ধতার অনুভূতি তৈরি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সংগ্রাম শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, এটি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল।’
‘আমাদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে এবং স্বাধীন চিন্তাধারা রক্ষা করতে হবে যদি আমরা সত্যিই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই,’ যোগ করেন তিনি।