নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট নয়: জামায়াত আমির

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
Highlights
  • খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওই সাক্ষাতে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বীকার করে জামায়াত আমির বলেন, 'বাংলাদেশে দুইজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ একসঙ্গে বসে চা খাবে, আর রাজনীতি নিয়ে কথা হবে না—এটা কি সম্ভব?'

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আকস্মিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন চলছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) দেখতে গিয়েছিলাম, কারণ তিনি একজন সম্মানিত ও অসুস্থ রাজনীতিবিদ। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। পাশাপাশি, যেহেতু তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছিলেন, তাই তিনিও উপস্থিত ছিলেন।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওই সাক্ষাতে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বীকার করে জামায়াত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশে দুইজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ একসঙ্গে বসে চা খাবে, আর রাজনীতি নিয়ে কথা হবে না—এটা কি সম্ভব? আমরা সাধারণ রাজনৈতিক বিষয়, নির্বাচন ও বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে এটি কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তমূলক বৈঠক ছিল না।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত আবারও বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে দেশ ও জাতির স্বার্থে যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটের ঘোষণা দেয়নি। বিএনপি জানিয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছে না। আমরা আপাতত অপেক্ষা করি।’

এক সময়কার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র হলেও বর্তমানে নানা ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য রয়েছে—তবে এটিকে ‘বিরোধ’ বলতে নারাজ দলটির আমির। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যেন ব্যক্তিগত বিরোধে রূপ না নেয়—এই সচেতনতা আমাদের রাখতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই রাজনীতিতে মতভেদ থাকুক, সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সেটাকে যেন আমরা শত্রুতা বা দমন-পীড়নের পথে নিয়ে না যাই। আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পথে এগোতে হবে।’

শফিকুর রহমান দাবি করেন, ইউরোপ সফরের সময় জামায়াতের প্রতিনিধি দল কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং তাদের বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবহিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানো যে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।’

জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা আলোচনা চলে আসছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থনেই বিএনপি সরকার গঠন করে। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের নির্বাচনেও দুই দল জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় আসে।

তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি জামায়াতকে জোটে রাখলেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটি প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে। এ প্রেক্ষাপটেই শফিকুর রহমানের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তা ঘিরে তার বক্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *