নাথানের ক্লাসে লিটন-শরীফুলদের ঘাম ঝরানো সকাল 

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
ফিটনেস সেশনে দৌড় শুরু ক্রিকেটারদের। ছবি: টাইমস অফ বাংলাদেশ

মঙ্গলবার সকালের কড়া রোদ। এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলে থাকা ক্রিকেটারদের সবাই না থাকলেও বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কিয়েলির ফিটনেস ক্লাসে। সকাল ৮টায় জিমে গা গরমের পর শরীফুল ইসলাম-তাসকিন আহমেদরা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আসেন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। এরপর ফিটনেস সেশন চলে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এই সময়টায় ক্রিকেটারদের শারীরিক সামর্থ্যের পুরোটার পরীক্ষা নিয়েছেন নাথান। 

মিরপুর স্টেডিয়ামের শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের সামনে সারি বেধে দাঁড়ান একে একে সবাই। সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব পরপর সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন রঙের কোন। ট্রেনার কেলি পাঁচ সেকেন্ডের কাউন্টডাউন দিয়েই বলে উঠছেন ‘গো!’। শোনার সাথে সাথে ক্রিকেটাররা ছুটেছেন নির্দিষ্ট কোনের পানে, আবার বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ফিরতে চেষ্টা করছেন শুরুর জায়গায়। 

সবচেয়ে কাছের যে কোন, সেই দুরত্ব ছুঁয়ে আবার শুরুর জায়গায় ফিরতে নাথান সময় বেধে দিয়েছিলেন পাঁচ সেকেন্ড। খানিকটা বিরতির পর আবারও নাথানের কমান্ড, এবার শরীফুল ইসলাম-লিটন দাসদের গন্তব্য আরো একটু দূরের ভিন্ন রঙের কোন। ফিরে আসতে সময় ১০ সেকেন্ড। পরের ভিন্ন রঙের কোন ছুঁয়ে শুরুর কোনে ফিরে আসতে সময় আরো ২০ সেকেন্ড বেশি। এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনেশনে কখনো গ্রুপ করে, কখনো সবার একসাথে চলেছে ফিটনেস সেশন। 

তবে ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বেশি ঘাম ঝরেছে শেষের দশ মিনিটে। সবগুলো কোন ছুঁয়ে আবার শুরুর জায়গায় ফিরে আসতে হয়েছে ক্রিকেটারদের, তাও টানা পাঁচবার। সময় ছিল পাঁচ মিনিট। যদিও মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া কেউই সেটা ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের কম সময়ে করতে পারেননি। তা দেখে সকালের সেশনের সবচেয়ে বড় হাততালিটা নাথান দিয়েছেন তার জন্যই। জাতীয় স্টেডিয়ামের ১৬০০ মিটার দৌড়ের দ্বিতীয় গ্রুপের প্রথম হওয়া তানজিম হাসান সাকিব এই ড্রিল সম্পন্ন করেছেন ৬ মিনিটের কিছু বেশি সময়ে। নাথানের প্রশংসা জুটেছে তারও। 

১৬০০ মিটার দৌড়ের মতো ফিটনেসের এই সেশনেও পিছিয়ে ছিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ৮ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে তার পাঁচবার সবগুলো কোন ঘুরে আসতে। শেষদিকে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত তাসকিনের এমন বেহাল দশা হয়েছিল, প্রায় হেঁটে হেঁটেই শেষ করেছেন বাকি থাকা ল্যাপ। জাকের আলী অনিক সকালের শুরুতে দারুণ ক্ষিপ্র থাকলেও সময়ের সাথে সাথে পিছিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত গরমে হাঁপিয়ে ওঠেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। স্পিনার নাসুম আহমেদেরও প্রায় একই অবস্থা। 

যদিও পুরোটা সময় সবাইকে উজ্জীবিত রাখতে গলা ছেড়ে উৎসাহ দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নাথানের অস্ট্রেলিয়ান বাচনভঙ্গি যারা বুঝতে পারেননি, তাদেরও সেটা বাংলায় বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। পেসার এবাদত হোসেন নিজ দায়িত্বে পানির বোতল ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃষ্ণার্ত সতীর্থদের দিকে। ‘ফার্স্ট বটল অফ ওয়াটার অলওয়েজ গোজ টু ইউর টিমমেট’, নাথানের বলা এই কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন এই ডানহাতি পেসার।  

ইনটেন্স এই ফিটনেস সেশন শেষ হয় নাথানের জোরালো হাততালির আওয়াজে। মাঠের এদিকওদিক পড়ে থাকা খালি পানির বোতলগুলো কুড়িয়ে একে একে মাঠ ছাড়েন সবাই। মিনিট পাঁচেকের বিরতির পর পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলতে আসেন ট্রেনার নাথান। সেখানেই কথা বলেছেন, সকালের ফিটনেস সেশন নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ান এই স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ বলেন, সূচি ফাঁকা পেলে এই সময়টায় ফিটনেস নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি। বাংলাদেশে আসলে ১২ মাসই ব্যস্ত থাকতে হয় খেলা নিয়ে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অফ সিজন থাকে, তবে এখানে সেই সুযোগটা নেই। তো যখনই সময় পাই, তখনই ফিটনেস নিয়ে কিছু টেস্ট, টুকিটাকি কাজ করি।’

মঙ্গলবারের ফিটনেস সেশনে বেশ এগিয়ে ছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদী হাসান মিরাজরা। কিন্তু তাসকিন আহমেদ, জাকের আলী, নাসুমদের অবস্থা বেশ শোচনীয়ই ছিল। এতে অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ দেখছেন না নাথান। তার ভাষ্য, ‘এখানে ফিটনেস টেস্টে পাশ-ফেলের কিছু নেই। কার ফিটনেসের কী অবস্থা, কার শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কী,  সেটা দেখাই উদ্দেশ্য। কাউকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করতে হলে, এই টেস্টগুলোই আমাকে সাহায্য করবে।’

অবশ্য ক্রিকেটারদের মধ্যে মজার ছলে মাঝেমধ্যে নাথানকে নিয়ে বেশ অভিযোগ-অনুযোগও শোনা যায়। তাদের খাটিয়ে মারেন কিনা! তবে নাথান ঠিকই প্রশংসা করলেন ক্রিকেটার নিয়ে, ‘আসলে আমি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এসব টেস্ট নিয়ে কোনো অভিযোগ পাই না। তারা সকলেই ভালো করার চেষ্টা করছে। সবার মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখি, দুর্দান্ত।’

এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলে থাকা ক্রিকেটারদের ফিটনেস ক্যাম্প চলবে আর একদিন। বুধবার শেষ হওয়ার পর একদিন বিরতি নিয়ে ১৫ আগস্ট থেকে চলবে স্কিল ক্যাম্প। ২০ আগস্ট থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্প চলবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ২৬ আগস্ট বাংলাদেশে আসবে নেদারল্যান্ডস। আপাতত ডাচদের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ নিয়ে প্রস্তুতি চললেও মূল লক্ষ্য এশিয়া কাপ। 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *