বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক শিল্পায়নের গতি কমিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করছে সংগঠনটি।
ডিসিসিআই বলছে, এ বছরের জুন মাসে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হওয়া, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, তা কার্যকরী অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য এক সতর্ক সংকেত।
ডিসিসিআই মনে করে, ব্যবসায়িক পরিবেশে অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলার অস্থিতিশীলতা, সীমিত জ্বালানি সরবরাহ এবং সর্বোপরি কঠোর মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির এই মন্দা আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
বর্তমানে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে ৫ দশমিক ৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এটি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বিনষ্ট করছে।
এ ধরনের সংকটের মধ্যেও, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদের হার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ডিসিসিআই’র মতে, এই উচ্চ সুদের হার দীর্ঘমেয়াদিভাবে ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং উৎপাদনশীল খাতের জন্য অত্যধিক ঋণভার তৈরি করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক গতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের নীতিতে ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর বিপরীতে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২০ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে, যা দেশের আর্থিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এ নীতি করদাতাদের ওপর বোঝা বাড়াবে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ আরও সংকুচিত করবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডিসিসিআই সুদের হার কমানো এবং ঋণের শর্তাবলি সহজ করার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে, সৎ ঋণগ্রহীতাদের পুনরুদ্ধারে সহায়তা প্রদান এবং তাৎক্ষণিক খেলাপি ঋণের ঝুঁকি এড়াতে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে, ডিসিসিআই আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার, ঋণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা এবং পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
ভবিষ্যতে বেসরকারিখাতের আস্থা পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আরও নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং খাতভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল মুদ্রানীতি প্রয়োজন বলেও মনে ডিসিসিআই।