সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশে ফিরেছেন। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাশেষে রোববার দিবাগত রাতে তিনি ঢাকায় ফেরেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ নিশ্চিত করেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় এসেছেন।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, টিজি ৩৩৯ ফ্লাইটটি রাত একটা ২০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছে। আবদুল হামিদ এবার সাধারণ যাত্রীদের মতো বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। তিনি ভিআইপি প্রটোকল চাননি। তিনি শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। তার সঙ্গে শ্যালক ও ছেলে রয়েছেন।

হুইল চেয়ারে বসা আবদুল হামিদ রাত পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ইমিগ্রেশনে অপেক্ষমাণ ছিলেন। তার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হতে সময় লাগছিল। রাত পৌনে তিনটায় তার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর তিনি বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করেন।
ঢাকায় ফিরে আবদুল হামিদ কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, সে ব্যাপারে রাতে নিশ্চিত তথ্য জানা যায়নি।

আবদুল হামিদ দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন কথা আলোচনায় ছিল কয়েকদিন ধরে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আর দেশে ফিরবেন না, এমন কথাও চালু ছিল। এমনকি তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন এক উপদেষ্টা। এমন পরিস্থিতিতে আবদুল হামিদের দেশে ফেরার ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলার আসামি হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ৭ মে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশ গমন করেন। রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ছাড়েন। ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাইবাছাই শেষে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত পান তিনি।
অন্যদিকে সকাল হতেই তার এ বিদেশ গমন নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তার দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের দুইজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার ও দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ঘটনা তদন্তের জন্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। ৩ সদস্যের কমিটির সভাপতি করা হয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর আবদুল হামিদের ‘নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়ার’ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি সরকারের ভেতরেও অনেক কথা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার করা হবে, এমন কথা শোনা যায়।
জানা গেছে, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় এ মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও রয়েছে।
১৯৪৪ সালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা আবদুল হামিদ ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরের বছরেই তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গণপরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য মনোনীত হন এবং ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদেও তিনি একই আসনে জয়লাভ করেন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ সাল পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। পরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদের স্পিকার মনোনীত হয়ে ২৩ এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন। এরপর তিনি দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।