বাংলাদেশে দুর্নীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেশ থেকে দুর্নীতি পুরোপুরি বিলীন হয়নি। তবে, সেটা বেড়েছে নাকি কমেছে তা বলার জন্য এখনই তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসনের শেষের বছরগুলোতে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছিল, তবে গত বছরের আগস্টে শাসনক্ষমতার পরিবর্তনের পরেও দুর্নীতি পুরোপুরি শেষ হয়নি।’
তিনি আরও জানান, দুর্নীতির পরিমাণ কমেছে নাকি বেড়েছে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এ কথা সত্য, দুর্নীতি রোধে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি ও পাচার হওয়া অর্থের অবস্থা
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, বিশ্বের প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার প্রতি বছর দুর্নীতির কারণে চুরি হয়ে যায়। এই অর্থ বিশ্বব্যাপী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং জলবায়ু নীতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দুর্নীতির কারণে পাচার হওয়া অর্থ শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এই অর্থের বড় অংশই ক্যাপিটাল মার্কেটে চলে যায়, যা মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তিনি বলেন, ‘যেসব দুর্নীতির মামলায় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা জড়িত, সেগুলোর সঠিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার হতে হবে, যাতে এসব অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়।’
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘সম্প্রতি লন্ডনে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআই যুক্তরাজ্য এবং স্পটলাইট অন করাপশন (যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা)–এর যৌথ উদ্যোগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকার ফল, যেখানে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হুমকি নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের কর্মী বা মানবাধিকারকর্মীরা হয়রানি, হুমকি বা সহিংসতার শিকার হন, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা বা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। নাগরিক সমাজের প্রতিটি সদস্য, বিশেষ করে সাংবাদিকরা, জনগণের জন্য তথ্য জানানো এবং সত্য প্রকাশ করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্রের জন্য এটি অপরিহার্য।’
টাকা পাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ
টিআইবি নির্বাহীর পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যদি বিদেশে অর্থ পাচার করার কোনো সুযোগ না থাকে, পাচারকারীরা টাকা পাচারের সুযোগ পাবেন না। তাই বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে এবং পাচারের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য আইনের প্রয়োগ আরও শাণিত করতে হবে।’
এ ছাড়া, তিনি বলেছেন, ‘বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে টিআইবি সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ তার বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য জানিয়ে বলেন, ‘এটি শুধু একটি প্রতীকী সফর নয়, বরং বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং সংহতি জানানো।’