দুই বোন হত্যা: ভাগ্নের স্বীকারোক্তি

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
সিসিটিভির ফুটেজে জোড়া খুনের আগে ও পরে গোলাম রব্বানী তাজ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় তাদের ভাগ্নে গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ (১৪) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর আগেই পুলিশ দাবি করেছিল, জোড়া খুনের ঘটনায় তাদের এক নিকটাত্মীয় জড়িত।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামে দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ তাকে আটক করে। ১৪ বছর বয়সী কিশোরের নাম গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ। সে নিহতদের এক বোনের সন্তান। সাইকেল কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য খালার বাসায় গিয়ে গোলাম রব্বানী টাকা চুরি করে। ৩ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় ধরা পড়ে গেলে এবং বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানানোর কথা বলায় দুই খালাকে চাকু ও শিলনোড়া (পুতা) দিয়ে নির্মমভাবে খুন করার কথা স্বীকার করেছে রব্বানী। এরপর সে বাসায় তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে যায়। বখাটে হিসেবে রাব্বানীকে আগেই স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়। সে টাকা চুরি করতে গিয়ে দুই খালাকে খুন করেছে, না অন্য বিষয় আছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।

জোড়া খুনের আলামতসহ আটক গোলাম রব্বানী তাজ। ছবি: ডিএমপি

কিশোর রব্বানীর বরাত দিয়ে নাসিরুল ইসলাম আরও জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে রব্বানী যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ার বাসা থেকে বের হয়। প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও সে শেওড়াপাড়ায় বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যায়। এ সময় তার মাথায় লাল রংয়ের ক্যাপ ও মুখে মাক্স ছিল, যা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে।

বাসায় বলে এসেছে কীনা তা জানতে চাইলে রব্বানী বড় খালাকে জানায়, ‘মা আসতেছে, আমি আগে চলে আসছি।’ এরপর বড় খালা তার জন্য শরবত বানাতে যান। তখন তার আরেক খালা সুফিয়া বেগম প্লেট-বাঁটি ধোয়ামোছা করে বারান্দার দিকে যান। রব্বানী তখন বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা চুরি করে।
চুরির ঘটনা দেখে বড় খালা তাকে বকাবকি করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি রব্বানীর মাকে জানাতে মোবাইল ফোন খুঁজতে থাকেন মরিয়ম বেগম। তখন ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটা ছুরি দিয়ে রব্বানী বড় খালার পেটে আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় বড় খালা ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেন। তখন সেজো খালা এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে রব্বানী। বড় খালা তখনো চিল্লাচিল্লি করায় রব্বানী রান্নাঘরের চুলার পাশে থাকা শিলপাটা এনে বড় খালার মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে।

খালাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে রব্বানী বাথরুমে গিয়ে হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পাশের রুমে গিয়ে তা পরিবর্তন করে। এ সময় রব্বানী খালাতো বোন মিষ্টির ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট পরে নেয়। আর তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙ্গিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে বাসা থেকে বের হয়। রব্বানী ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে যায়।

শেওড়াপাড়া থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে রব্বানী শনির আখড়ার দিকে রওনা হয়। কিছুটা পথ যাওয়ার পর বাসার চাবি ও তার পরিহিত লাল ক্যাপ রাস্তায় ফেলে দেয় রব্বানী। শনির আখড়া পৌঁছে সে চুরির টাকা থেকে ৪৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারণে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।

শনির আখড়ার একটি মার্কেটের মসজিদের টয়লেটে ঢুকে রব্বানী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। তার ব্যাগে থাকা গোলাপী পাঞ্জাবি পরে নেয়। এরপর ব্যাগের ভেতরে থাকা রক্তমাখা কাপড় সে টয়লেটের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। নিজ বাসার সামনে পৌঁছার পর রব্বানী দেখতে পায় জুতায় রক্ত লেগে আছে, তখন সেটিও ছুড়ে ফেলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর এ খুনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। ছবি: ডিএমপি

ঘটনার পরদিন বিকেলে সেজো খালাকে দাফন করার জন্য নানুর বাড়ি ঝালকাঠি যায় রব্বানী। এদিকে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষন ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রব্বানীকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করে। এরপর ঝালকাঠিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আটক করে রব্বানীকে। পরে তার দেয়া তথ্যে ইর্স্টান শপিং সেন্টারের পাশে থেকে রক্তমাখা টি-শার্ট ও দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। তার জুতাও উদ্ধার হয় বাসার সামনে থেকে।

গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ পুলিশের কাছে দেয়া তথ্যের পাশাপাশি সোমবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সে নিজ হাতে দুই খালাকে খুনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মিরপুর বিভাগের উপপরিদর্শক কফিল উদ্দিন তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন।

গত ৯ মে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটে বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম (৫২) খুনের শিকার হন। রাত ১১টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *