উত্তরের জনপদে যুগান্তকারী যোগাযোগ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হয়েছে গাইবান্ধার হরিপুর–চিলমারী ‘মাওলানা ভাসানী’ সেতুর স্বপ্নযাত্রা।
বুধবার দুপুরে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উদ্বোধনের পরপরই মোনাজাত করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক। এরপর সেতুর সুন্দরগঞ্জের হরিপুর প্রবেশমুখে ফিতা কেটে সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়।
এ সময় উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে করমর্দন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এ সময় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এলজিইডির কর্মকর্তা ও সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, উদ্বোধনের আগে থেকেই সেতু এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোর থেকেই তিস্তা পাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন দুই জেলার শত শত দর্শনার্থী এবং সুন্দরগঞ্জ-চিলমারী উপজেলার হাজারো সাধারণ মানুষ।

কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে, কেউবা দল বেঁধে আসেন জীবনের ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে—এই আনন্দে সবার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস আর গর্বের আলো।
এর আগে গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটি হবে ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতা ও একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর চালু হলো এই সেতু।
এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা।

১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু।
ফলে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার সরাসরি সংযুক্ত হবে।
সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা–কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় আসবে বড় পরিবর্তন। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে। গড়ে উঠবে ছোট-মাঝারি শিল্প কারখানা।
ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০–১০০ কিলোমিটার। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।