ভারতের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রাখি গুলজার পাঁচ বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন। আবারও দেখা যাবে তাকে বাংলা সিনেমায়। পশ্চিমবঙ্গের নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখার্জি পরিচালিত ‘আমার বস’ ছবিতে স্বামীহারা এক প্রবীণ নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এতে বেশিরভাগ শুটিংয়ে ঢাকাই শাড়ি পরেছেন ৭৭ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।
ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া জামদানি শাড়ি বেশি পরেছেন রাখি গুলজার। ঘিয়ে রঙের ওপর সুতোর কাজ করা তাঁতের শাড়ি ও হাতে বোনা সিল্কের শাড়িতেও পর্দায় হাজির হবেন তিনি। ছবিটিতে তার পোশাক পরিকল্পনা করেছেন অভিষেক রায়। মুম্বাইয়ে রাখির বাসায় ঢাকাই শাড়ির সম্ভার নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে শুটিংয়ে পরার জন্য রাখি বেছে নেন কয়েকটি শাড়ি। পাশাপাশি নিজের বেশ কিছু শাড়ি-ব্লাউজ দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন কাজে লাগতে পারে।

‘আমার বস’ ছবিতে থাকছে মা ও ছেলের গল্প। অফিস-ভিত্তিক বৃদ্ধাশ্রম চালু করেন বসের মা। এর মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আরও যত্নশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। আগামী ৯ মে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে ছবিটি।

রাখি গুলজার অভিনীত সর্বশেষ বাংলা সিনেমা ‘নির্বাণ’ মুক্তি পায় ২০১৯ সালে। এটি পরিচালনা করেছেন গৌতম হালদার।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে বাঙালি পরিবারে জন্ম রাখির। তার পিতৃভিটা ছিল বাংলাদেশের মেহেরপুরে। পিতা জুতার ব্যবসা করতেন। দেশভাগের সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে যান।

সত্তর ও আশির দশকের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাখি গুলজার। তার ঝুলিতে আছে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস। ২০০৩ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পেয়েছেন তিনি।
১৯৬৭ সালে দীলিপ নাগ পরিচালিত বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় রাখির। তখন তার বয়স ২০ বছর। ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে রাখির প্রথম হিন্দি ছবি সত্যেন বোস পরিচালিত ‘জীবন মৃত্যু’ মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। যশ চোপড়ার ‘দাগ: অ্যা পয়েম অব লাভ’ (১৯৭৩) ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে প্রথমবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন রাখি। অনিল গাঙ্গুলি পরিচালিত ‘তপস্যা’ (১৯৭৬) তাকে এনে দিয়েছে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘রাম লক্ষ্মণ’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে দ্বিতীয়বার সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হন তিনি।

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরৎ’ ছবিতে রাঙা পিসিমা চরিত্রে দারুণ অভিনয়ের সুবাদে ২০০৩ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হয়েছেন রাখি। ১৯৭৪ সালে ‘২৭ ডাউন’ ছবির জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্পেশাল স্যুভেনির স্বীকৃতি পান তিনি।
ব্যক্তিজীবনে কবি, গীতিকার ও লেখক গুলজারের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে বিয়ের বন্ধনে জড়ান রাখি। তাদের মেয়ে মেঘনা গুলজার বলিউডের প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম।