ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো।
ঢাবির টিএসসি অডিটোরিয়ামে শনিবার বিকাল ৫ টায় প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাসভিত্তিক এই স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো ‘হাসির আড্ডা – প্রথম এডিশন’।
দেশের ক্যাম্পাস সংস্কৃতিতে এই স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো শিক্ষার্থীদের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। একদম বিনামূল্যে এই শো উপভোগ করতে মুখে কৌতূহল ও চোখে উচ্ছ্বাস নিয়ে দুপুরের পর থেকেই জমতে শুরু করে শিক্ষার্থীদের ভিড়।
একে একে তরুণ কমেডিয়ানরা মঞ্চে উঠে নিজেদের গল্পে মিশিয়ে দেন হাস্যরস। কেউ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের টানাপোড়েনকে রসিকতায় রূপ দেন, কেউবা কৌতুকের ভাষায় উপস্থাপন করেন সামাজিক বাস্তবতা। প্রতিটি পরিবেশনার পর হাসির রোল আর করতালিতে ভরে ওঠে অডিটোরিয়াম।
আগত শিক্ষার্থী দর্শকরা বিস্মিত হয়ে জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু হবে কখনো ভাবতে পারিনি। এতদিন আমরা শুধু ইউটিউবেই এসব দেখে এসেছি।’
ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানটি একক ভাবে আয়োজন করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী অনিদ হাসান, যিনি আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থীও। ফলে অনিবার্যভাবেই প্রশ্ন ওঠে। এটি তার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ কিনা?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি টাইমস অব বাংলাদেশ কে জানান, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত একটি উদ্যোগ। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ স্ট্যান্ড আপ কমেডির একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। অনেক দিন ধরেই ভেবেছি, দেশে ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই সংস্কৃতির বিকাশ দরকার। আজকে আমি ডাকসু নির্বাচনে পদ প্রার্থী না হলেও একইভাবে এই শো আয়োজনের চেষ্টা করতাম।’
স্ট্যান্ড আপ কমেডির মূলধারায় আসতে হলে এ ধরনের আয়োজন বাড়ানোর আশা ব্যাক্ত করেন শোতে অংশ নেওয়া তরুণ কমেডিয়ান পৌশি রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানুষ এখনো জানেই না এই শিল্পের অস্তিত্ব আছে। তাদের কাছে শিল্প মানে গান, নাচ, কবিতা। কিন্তু এরকম শো হলে আগ্রহ বাড়বে। এমনকি সামাজিক ইস্যুতেও আমরা কমেডির মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে পারি।’
অভিজ্ঞ কমেডিয়ান সৈয়দ রিদয়ান হোসেন বিপ্র শোতে পারফর্ম করে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে নাভিদ মাহবুবের হাত ধরে এনসিসির মাধ্যমে বাংলাদেশে এই ধারার সূচনা ঘটলেও, রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত তেমন প্রসার ঘটেনি এই সংস্কৃতির। ২৪ অভ্যুত্থানের পর যেখানে আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু রাজনৈতিক সংস্কৃতির আধিপত্য ছিল, এখন আমরা বৈচিত্র্যের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’ তবে রাজনৈতিক কমেডির সীমারেখা প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বললেন, ‘জোকস আর রাজনৈতিক স্টেটমেন্টের পার্থক্য সব দর্শক বোঝে না। তাই শিল্পীর দায়িত্ব থাকে বিবেকের কাছে একটা সীমা টেনে রাখা।’
শুধু গেস্ট পারফর্মাররাই নন, ওপেন মাইকের সুযোগে মঞ্চে উঠে এসেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। ঢাবির ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী রাহী নায়াব সেই সুযোগ লুফে নেন এবং মন জয় করেন দর্শকদের। কমেডির বাস্তবতা সম্পর্কে টাইমস অব বাংলাদেশ কে বলেন, ‘বাংলাদেশে স্ট্যান্ড আপ কমেডি এখনো তেমন প্রচলিত নয়। এখানে মানুষের অফেন্ড হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে। কিন্তু আমাদের সাহসী হতে হবে। আমি চাই মানুষ এটাকে নিছক কৌতুক হিসেবেই নিক। শিল্পীর উদ্দেশ্য কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়।’
বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গান, নাটক ও প্রথাগত সব সংস্কৃতির পাশাপাশি স্ট্যান্ড আপ কমেডিও যে হতে পারে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক চর্চা তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দর্শকদের সাড়ায়।
অন্যদিকে পৌশির চোখে এটি সাংস্কৃতিক বিকাশের হাতিয়ার, বিপ্রর চোখে গণতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন, আর রাহীর চোখে তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো এই স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো কেবল একটি বিকালের এক হাসির অনুষ্ঠান নয়, বরং ক্যাম্পাস সংস্কৃতিতে নতুন এক ধারার সম্ভাবনা উন্মোচনের ইঙ্গিতও বটে।