মুন্সিগঞ্জে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে বসেছিল সালিশ, সেখানে দুই কিশোর গ্রুপের দ্বন্দ্বে তিনজন খুনের শিকার হন। চার বছর আগের এ ট্রিপল মার্ডার মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে আরও পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মাসুদ করিম এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-রাকিবুল হাসান সৌরভ, শিহাব প্রধান ও রনি বেপারি।
আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-শাকিব প্রধান, শামীম প্রধান, অনিক বেপারি, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর ও রায়হান। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর বিল্লাল হোসেন জানান, মামলার ৮ আসামিকে সাজা দেয়া হলেও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ মার্চ মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুরে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে ইমন গ্রুপ ও সৌরভ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সৌরভ গ্রুপের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই ইমন হোসেন (২২) ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিব হোসেন (১৯) নামে দুইজনের মৃত্যু হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তিন জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন আওলাদ হোসেন মিন্টু (৪৭) নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়।
তিন খুনের এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ মুন্সিগঞ্জ থানায় মামলা করেন মিন্টুর স্ত্রী খালেদা আক্তার।
পুলিশ মামলার তদন্তশেষে ২০২২ সালের ৮ জুন রাকিবুল হাসান সৌরভসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মুন্সিগঞ্জ আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার ট্রাইব্যুনাল নম্বর-৩ এ পাঠানো হয়। পরে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলার বিচার চলাকালে ২৮ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এদিকে মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ ও মামলার বাদী খালেদা আক্তার।
খালেদা আক্তার বলেন, ‘মামলায় ন্যায়বিচার পাইনি। স্বামী হত্যার বিচারের জন্য প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবো। যতদিন বেঁচে আছি ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।’
প্রসিকিউটর বিল্লাল হোসেনও রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।