ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে শঙ্কায় বাংলাদেশ

admin
By admin
5 Min Read
হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন। সে সুবাদে বাংলাদেশি পণ্যের ওপরে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে, যা আগে ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোন দেশের ওপর কত হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি তালিকা তুলে ধরেন তিনি। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রায় ১০০টি দেশের ওপর আরোপ করা এই শুল্ক বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণার এই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ হিসাবে অভিহিত করে বলেন, “আমরা একটি স্বাধীন ও সুন্দর জাতি হতে যাচ্ছি। নতুন এই ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবার সম্পদশালী’ করবে। এই দিনটিকে আপনারা ভবিষ্যতে স্মরণ করবেন। আপনারাই তখন বলবেন, তিনি সঠিক ছিলেন। এই দিনটি আমাদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।”

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক পরিকল্পনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪৬ শতাংশ, তাইওয়ানের ৩২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৩২ শতাংশ, জাপানের ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ৩৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ৪৯ শতাংশ, বাংলাদেশের ৩৭ শতাংশ, ভারতে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের ১০ শতাংশ, নেপালের ১০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ১৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪৪ শতাংশ, মিয়ানমারের ৪৪ শতাংশ এবং লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমান ছিল আনুমানিক ১০ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছর দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে বাংলাদেশে। আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের মত।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রফতানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি মন্তব্য না করা হলেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কথা বলেছেন।

বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক পর্যালোচনা করছে। এসব শুল্ক আরও যুক্তিসংগত করার উপায় খুঁজে বের করতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা শুল্কবিষয়ক জটিলতা নিরসনে প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আমাদের বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে আসছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের চলমান কার্যক্রম শুল্ক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’

এদিকে অর্থনীতিবিদ ও রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন শুল্কারোপের ফলে রফতানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, যা বাংলাদেশের রফতানির মূল অংশ, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নতুন শুল্কের ফলে মার্কিন ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশি পোশাকের দাম বাড়বে, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। এতে করে ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকতে পারেন, ফলে রফতানি আদেশ হ্রাস পেতে পারে। মার্কিন ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশি পোশাকের দাম বাড়বে এবং দেশটির বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে দ্রুত কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে রফতানির নেতিবাচক প্রভাব সীমিত রাখা সম্ভব হয়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি ব্যয় বেড়ে যাবে, যা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। তবে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে, কারণ তাদের ওপর বাংলাদেশের তুলনায় ১০ শতাংশ কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ভারতীয় রফতানিকারকরা তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম বড় বাজার। প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা মোট রফতানির বড় অংশজুড়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমে গেলে বাংলাদেশের সামগ্রিক রফতানি আয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *