জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি দোষ শিকার করে এই মামলায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রের সাক্ষী হতে চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শুনানি শেষে এ তথ্য জানান মামলার প্রসিকিউশন পক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এর মধ্য দিয়ে আলোচিত জুলাই গণহত্যা মামলায় প্রথমবারের মতো কোনো উচ্চপদস্থ অভিযুক্ত ব্যক্তি দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
অভিযোগ গঠনের আদেশ ঘোষণার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাঠগড়ায় উপস্থিত আসামি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে আদালত জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কী বলবেন।
এর জবাবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মামুন বলেন, তিনি উক্ত অভিযোগগুলোর দায় স্বীকার করছেন এবং সত্য উদঘাটনের স্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী (রাজসাক্ষী/approver) হতে চান।
পরে তার আইনজীবী ট্রাইব্যুনালের কাছে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। একই সঙ্গে আদালত মামলায় সূচনা বক্তব্য (Opening Statement) উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এর আগে একই দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মামলায় আসামিদের দায়মুক্তির আবেদন খারিজ করে দেন। অপর দুই বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এই আদেশের মধ্য দিয়ে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হলো।
গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল পলাতক শেখ হাসিনা ও কামালকে হাজির হওয়ার জন্য বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। তবে তারা নির্ধারিত সময়েও আত্মসমর্পণ না করায় রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমেই অভিযোগ গঠন শুনানি চলে।
১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়। একই মামলায় কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করে বিটিভি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের হওয়া প্রথম মামলাটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে- একটি আওয়ামী লীগ শাসনামলের গুম-খুন সংক্রান্ত এবং অন্যটি হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত আন্দোলন দমনকালে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য গণহত্যা, গুম, ধর্ষণ ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ উঠে। এইসব অপরাধের বিচার বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।