জীবন-স্মৃতি আর সুরে সাজানো ‘জুই ফুল’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read

চ্যানেল আই ৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে সম্প্রচার করতে যাচ্ছে ‘জুই ফুল: সাবিনা ইয়াসমিন’। অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়ে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গানের জগতে ৫৫ বছরের পথচলাকে উদযাপন করা হবে।

২ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট দীর্ঘ এই বিশেষ আয়োজনটি সাজানো হয়েছে দুই অংশে—একটি অংশে থাকছে জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনা, আর অন্য অংশে সাবিনা ইয়াসমিনের জীবন ও সঙ্গীত নিয়ে আলাপ। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয়েছে তিনটি ভেন্যুতে—ঠিকানা রিসোর্ট, চ্যানেল আই স্টুডিও এবং শিল্পীর নিজ বাসভবনে।

অনুষ্ঠানটি ধারণ করার সময় সাবিনা ইয়াসমিনের সহয়তার কথা উল্লেখ করে শাইখ সিরাজ বলেন, ‘সাবিনা আপা শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু ক্যামেরা অন হওয়া মাত্রই তার মুখে ফুটে উঠেছিল উজ্জ্বল হাসি। তার আগ্রহ আর সহযোগিতা না পেলে এই অনুষ্ঠান পূর্ণতা পেত না।’

এতে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকারিদা আখতার ববিতা, কবরী সারোয়ার, সুজাতা ও রোজিনা তাদের স্মৃতিচারণ করেছেন সাবিনা ইয়াসমিনকে ঘিরে। সুজাতা প্রথম দেখার স্মৃতি টেনে এনে বলেন, ‘তখন ওর গায়ে শুধু একটা ফ্রক ছিল। অবাক হয়েছিলাম জেনে যে সে গান গাইতে যাচ্ছে।’

আলাপচারিতায় উঠে এসেছে শিল্পীর অজানা কিছু তথ্যও। জন্মসনদে তার নাম ছিল দিলশাদ ইয়াসমিন, তবে সারা দেশ তাকে চিনেছে সাবিনা ইয়াসমিন নামে। ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ এর পর থেকে সারাদেশে তার পরিচিতি। অভিনেত্রী কবরী স্বীকার করেছেন, সাবিনার একটি গান ‘সে যে কেন এলো না’ প্রথমে তার ভালো লাগেনি। আবার সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার কথাও—লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা রাজ কাপুরের সেই বিখ্যাত উক্তি, যখন তিনি তাকে বলেছিলেন—‘আওয়াজো কি দেবি’ (কণ্ঠের দেবী)।

কেবল নস্টালজিয়া নয়, শিল্পী শিল্পীজীবনের সমস্যা নিয়েও খোলাখুলি মত দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের গায়ক-গায়িকাদের গান থেকে কোনো রয়্যালটি না পাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। তার ভাষায়, ‘এ কারণে অনেকে শিল্পীই আর্থিক সংকটে ভোগেন। যদি রয়্যালটির ব্যবস্থা থাকত, অনেক প্রতিভাবান শিল্পীকে বার্ধক্যে কষ্ট করতে হতো না।’

সংগীত পর্বে অংশ নেন সমসাময়িক সাতজন কণ্ঠশিল্পী—দিলশাদ নাহার কনা, সোমনুর মনির কোনাল, ইমরান মাহমুদুল, আতিয়া আনিশা, রাকিবা ঐশী, সানিয়া সুলতানা লিজা ও জানিতা আহমেদ ঝিলিক। তারা পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমিনের পছন্দের ১২টি গান—‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘একি সোনার আলোয়’, ‘এই পৃথিবীর পরে’, ‘শতো জনমের স্বপ্ন’, ‘ ছেড়োনা ছেড়োনা হাত’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’সহ আরও কিছু কালজয়ী গান। সমাপনীতে সবাই একসঙ্গে গেয়েছেন ‘সুন্দর সুবর্ণ লাবণ্য’।

শাইখ সিরাজ এই আয়োজনের প্রেরণা ও চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আগের প্রজন্মের অনেক শিল্পী ধীরে ধীরে আমাদের চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছেন। অথচ তাদের কাজের রয়েছে বিশাল আর্কাইভাল মূল্য। এগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। সেই ভাবনা থেকেই আমার এই উদ্যোগ।’

সাবিনা ইয়াসমিনও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আবেগ প্রকাশ করেছেন, ‘অনুষ্ঠানটা যেমনভাবে হয়েছে, আমি ভাষাহীন। একটিও মুহূর্ত ছিল না যেটা একঘেয়ে লেগেছে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *