গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলায় সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার বিকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে গাজীপুরের দুদক কার্যালয়ে এই মামলা করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে নগর ভবনসহ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিল তৈরি, মাস্টার রোলে কর্মী নিয়োগ, ভুয়া সভা, অনুদান, আপ্যায়ন, ইজারার খাতসহ বহু খাতে কোনো কাজ না করেই বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অর্থ সরকারি উন্নয়ন তহবিল ও সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাত থেকে কৌশলে তুলে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট ৭৫০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজস্ব তহবিল থেকে ১৩৬ কোটি টাকা, টেন্ডার/আরএফকিউ বাবদ ১২৮ কোটি টাকা, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নয় কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই কোটি টাকা, উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তরের নামে ৯৯৯ কোটি টাকা, রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে ৭২ কোটি টাকা, মাস্টার রোলের কর্মী ও করোনা খাতে ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমনকি হাট-বাজার ইজারা ও ট্রাফিক নিয়োগ খাতেও অসংখ্য অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের কোনাবাড়ী শাখায় ভুয়া হিসাব খুলে ২ দশমিক ৬ কোটি টাকা উত্তোলন, মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন দেখিয়ে আরও কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
দুদক গাজীপুরের উপ-পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে অপরাধ সংশ্লিষ্ট সব প্রমাণ ও তথ্য যাচাই শেষে এজাহার তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ২৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলনের তথ্য মিলেছে, যা আদতে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই দুর্নীতিতে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।