জাকসু: ১৪ হলের ভোট গণনা শেষ, সন্ধ্যা নাগাদ ফল প্রকাশের সম্ভাবনা

টাইমস রিপোর্ট
6 Min Read
জাকসু নির্বাচনে চলছে ভোট গণনা। ছবি: টাইমস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনার দ্বিতীয় দিন চলছে। শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৪টি হলের ভোট গণনা শেষ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই গতিতে চললে জাকসু নির্বাচনের ফল সন্ধ্যা নাগাদ প্রকাশ করা যেতে পারে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শেষ হয় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ব্যালট বাক্স নির্বাচন কমিশনে নেওয়া হয় রাত সাড়ে ৮টার দিকে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্যানেলগুলোর আপত্তির মুখে ভোট গণনার কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ওএমআর মেশিন। ফলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গোনা হচ্ছে। আর সে কারণেই এখনো চলছে ভোট গণনার কাজ।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী মীর মশাররফ হোসেন হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবায়ের শাবাব। ১৯১ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা।

জুবায়ের শাবাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট গণনার যে গতি রয়েছে সে অনুযায়ী দুপুরের মধ্যে শেষ হবে হল সংসদের ফলাফল নির্ধারণ। এরপর শুরু হবে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা। ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে স্বাভাবিকভাবে এটিও শেষ করতে সময় লাগবে। ধারণা করা হচ্ছে সন্ধ্যার পর জাকসু নির্বাচনের ফলাফল দেওয়া যাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮০৫ জন। যাদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৮ হাজার ১৬ জন। সে হিসেবে ভোটের হার ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

জাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস
জাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, আল বেরুনী হলে ২১১ ভোটের বিপরীতে ভোট পড়েছে ১২৫টি, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৪১ ভোটের বিপরীতে ২১৬, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৮৭ ভোটের বিপরীতে ৩১০, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮৭ ভোটের বিপরীতে ১৩৮, শহীদ সালাম—বরকত হলে ৩০৩ ভোটের বিপরীতে ২২৪, মাওলানা ভাসানী হলে ৫২১ ভোটের বিপরীতে ৩৮৪, জাহানারা ইমাম হলে ৪০২ ভোটের বিপরীতে ২৪৭, প্রীতিলতা হলে ৪০২ ভোটের বিপরীতে ২৪৯, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪১৭ ভোটের বিপরীতে ২৪৯, ১০ নম্বর ( ছাত্র) হলে ৫৪১ ভোটের বিপরীতে ৩৮১ ভোট পড়েছে।

এছাড়া শহীদ রফিক—জব্বার হলে ৬৫৬ ভোটের বিপরীতে ৪৭০, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০ ভোটের বিপরীতে ২৪৬, ১৩ নম্বর (ছাত্রী) হলে ৫৩২ ভোটের বিপরীতে ২৯২, ১৫ নম্বর (ছাত্রী) হলে ৫৭৭ ভোটের বিপরীতে ৩৫০, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫৮ ভোটের বিপরীতে ২৬১, রোকেয়া হলে ৯৫৭ ভোটের বিপরীতে ৬৮০, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৮ ভোটের বিপরীতে ৪৮৯, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৯৩ ভোটের বিপরীতে ৫৯৫, ২১ নম্বর (ছাত্র) হলে ৭৪৬ ভোটের বিপরীতে ৫৬০, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯৩ ভোটের বিপরীতে ৭১৫, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯১৪ ভোটের বিপরীতে ৭৫২ ভোট পড়েছে।

অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন

জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল। তারা দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

সম্প্রীতির ঐক্যের জিএস প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, `নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা, অব্যবস্থাপনা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ পুরো নির্বাচনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে চরম অনিচ্ছা ও অসহযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে।‘

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রথম দুই ঘণ্টায় কোনো কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, যদিও আগের রাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল।’

‘ভোটকেন্দ্রে আঙুলে ব্যবহৃত কালি সকাল থেকে দেওয়া হয়নি, পরে আনা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা হাত থেকে উঠে যাচ্ছিল। নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করে বিশেষ করে ছাত্রী হলে নির্দিষ্ট প্যানেলের (ছাত্রশিবির) লিফলেট বিতরণ করা হয়, এমনকি বুথের ভেতরে লিফলেট সাজানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় জাহানারা ইমাম হলে মেয়েদের মারধরের ঘটনাও ঘটে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন শেষে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: অনিক রহমান/ টাইমস

প্রশাসন ১০ শতাংশ ব্যালট বেশি ছাপিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘যা বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত সরবরাহ করা হয় এবং কোথাও কোথাও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নজরুল হলে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে কিছু প্রার্থীর নাম বাদ পড়ে, পরে হাতে লিখে ব্যালটে যোগ করা হয়।‘

একই অভিযোগ বাগছাস সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামেরও। রাত দেড়টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান।

অন্যদিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে এবং প্রশাসনের কাজের অসচ্ছতা দেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভোট বর্জন করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

জাকসু নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিয়ে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মাদ বাবর বলেন, ‘এই প্রহসনের নির্বাচন আমরা বয়কট করছি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল হল এবং শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হলে আমাদের কোনো পোলিং এজেন্টেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আবার ভিপি পদপ্রার্থী শেখ সাদি শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হলে নির্বাচন পরিদর্শন করতে গেলে তাকে খারাপ আচরণ করে বের করে দেওয়া হয়। এই কারচুপির ইলেকশন আমরা বয়কট করলাম।’

‘আমরা দেখেছি কিভাবে মেয়েদের হল গুলোয় সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারা কোনো কিছুর স্বচ্ছতা বজায় রাখেনি। জাহানারা ইমাম হলে এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে ভোট কারচুপির অভিযোগ এসেছে। আমাদের কোনো পোলিং এজেন্টেরদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ১১ হাজার ভোটারের বিপরীতে ১৫ হাজার ব্যালট পেপার  ছাপা হয়েছে। অধিক ব্যালট পেপার কেনো ছাপানো হলো সেটি নিয়েও ইলেকশন কমিশন কোনো বিবৃতি দেয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যালট মেশিন এবং ব্যালট পেপার ক্রয় করা হয়েছে জামায়াত নেতার থেকে। কেন এটি করা হলো তা আমাদের স্পষ্টভাবে বলে দেয়নি ইলেকশন কমিশন। আমরা এই ইলেকশন কমিশনকে মোটেও বিশ্বাস করি না এবং এটি একটি কারচুপি নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন চলছে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *