‘মিয়া ভাই’খ্যাত পরিচালক চিত্রনায়ক ফারুকের জন্মদিন সোমবার (১৮ আগস্ট)। আকবর হোসেন পাঠান থেকে তিনি হয়েছেন কোটি দর্শকের প্রিয় নায়ক ফারুক। তিনি শুধু একজন অভিনেতাই ছিলেন না, ছিলেন সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সমাজচিন্তার এক বলিষ্ঠ মুখ।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ফারুকের জন্ম। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা কলেজে। পরে অভিনয়ের প্রতি টান থেকে নাম লেখান সিনেমা জগতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, যেটা পরবর্তীতে তার ব্যক্তিত্বের গঠন ও গ্রহণযোগ্যতায় বড় প্রভাব ফেলে।
তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জলছবি’-র মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই তিনি নজর কাড়েন দর্শকদের। এরপর একে একে ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘সুজন সখী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘সারেং বউ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘মিয়া ভাই’সহ অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বাংলা সিনেমার ‘সোনালী যুগের’ অন্যতম সেরা নায়ক হিসেবে।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ফারুক সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তিনি দেশের নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ফারুক ছিলেন একজন অত্যন্ত মানবিক ও বিনয়ী মানুষ। শিল্পী সমাজের কল্যাণে, সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবসময়ই ছিলেন অগ্রগামী। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ একজন পারিবারিক মানুষ। স্ত্রী ফারহানা পাঠান ও সন্তানসহ তার পরিবার ছিল তার জীবনের অন্যতম প্রেরণা।
অভিনেতা হিসেবে দারুণ প্রশংসা পেলেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র দুবার। ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’-এ ‘পার্শ্ব অভিনেতা’ হিসেবে এবং ২০১৬ সালে ‘আজীবন সম্মাননা’ পান।
২০১২ থেকে বেশ কয়েকবার দেশ-বিদেশের নানান হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেছিলেন ফারুক। সবশেষ ২০২১ সালে মতিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থা খারাপ হয়। তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ মে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন।