চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে সাত দফা দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ’।
সম্প্রতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অনুদান তালিকা প্রকাশের পর এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে শুরু হওয়া তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুদান প্রদানের বিচার প্রক্রিয়ায় পক্ষপাত ও অস্বচ্ছতা রয়েছে। অনুদান নির্ধারণে কেবলমাত্র ২-৩ মিনিটের পিচিংয়ের ওপর নির্ভর করা হয়েছে, যেখানে কোনো লিখিত স্কোরিং মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি।
এছাড়া, জুরিবোর্ড ও অন্যান্য কমিটিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের চেয়ে আমলাদের আধিক্য থাকায় শিল্পের বাস্তব চাহিদা উপেক্ষিত হচ্ছে।
বিশেষভাবে তারা স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ তুলে ধরে জানায়, যারা সরকারি কমিটির সদস্য, তারাই অনুদানপ্রাপ্ত হয়েছেন—এটা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও আইনগত নির্দেশনা স্পষ্ট নয়, কিন্তু এটি সুশাসনের পরিপন্থী বলে মনে করে তারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি কিছু দাবি জানিয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে-চূড়ান্ত তালিকা ও স্কোর প্রকাশ, আপিলের সুযোগ সৃষ্টি, কমিটিতে অনুদানের আবেদনকারীদের নিষিদ্ধকরণ, স্পষ্ট স্কোরিং গাইডলাইন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো এবং আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে অনুদান প্রক্রিয়াকে হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য, ন্যায্য ও অংশগ্রহণমূলক। তারা আশা করছে, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই বিতর্কের অবসান ঘটাবে এবং শিল্পের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।
এদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘চলচ্চিত্র অনুদান, নিজেদের মধ্যেই ভাগবাটোয়ারা’ শিরোনামের প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সরকার প্রদত্ত চলচ্চিত্র অনুদান প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে।
একটি সরকারি বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী চলচ্চিত্র বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
এই নীতিমালার আওতায় দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়—পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচন ও তদারকি কমিটি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচন ও তদারকি কমিটি।
প্রতিটি কমিটিতে ১১ জন সদস্য ছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে নীতিমালা অনুসারে একটি অনুদান কমিটিও গঠিত হয়, যা সুপারিশকৃত গল্প, চিত্রনাট্য এবং আবেদনপত্র মূল্যায়ন করে।
মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে জানায়, নীতিমালার কাঠামোর মধ্যেই ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে’ সকল নির্বাচন করা হয়েছে।