ফের আক্রমণের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই নম্বর গেট এলাকা ত্যাগ করেছেন ওই এলাকায় মেস-কটেজে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় সহপাঠী এবং বন্ধুদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অন্যান্য পরিচিতদের ওখানে উঠেছেন।
চবি’র দুই নাম্বার গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাণজিত সিধু। তিনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শনিবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দুই নাম্বার গেটে বাসায় বন্দি ছিলাম। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমাদের বাসায় তল্লাশি চালায়। আমরা ওই অবস্থা থেকে রোববার দুপুরে রেহাই পাই।’
‘এরপরই আবার অনেক বড় সংঘর্ষ হয়েছে। রাতে আবারও স্থানীয়দের হামলা হতে পারে, সেই আশঙ্কায় আমরা নিজেদের বাসায় না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলে এসেছি। আপাতত বন্ধুর কাছে থাকছি,’ বলেন তিনি।

একই এলাকায় বসবাসকারী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তামিম বলেন, ‘দেশের অন্যতম একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়েও আমরা অনিরাপদ। আমাদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রশাসনের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। আপাতত নিজের জায়গা ছেড়ে সাউথ ক্যাম্পাসে বন্ধুর বাসায় থাকছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাসায় যাব।’
নিজেদের বাসা ত্যাগ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরের আবাসিক হলের নারীরা। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে মানবিক সংগঠন ‘উত্তরণ’ এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ড. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আনুমানিক দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে পাঁচশ’ জনকে আমরা সিএমসি তে পাঠিয়েছি। ১০ জনের মত গুরুতর আহত হয়েছেন। দুই জন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।’
এর আগে, শনিবার চবির এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান মারধরের ঘটনায় দুই নম্বর গেট এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে এবং আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। রাতভর সংঘর্ষে অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন এর জেরে আবারো সংঘর্ষে আহত হন দেড় হাজারের বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন চবি ও এর আশেপাশের এলাকায় সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে। স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা। মোতায়েন করা হয়েছে সেনা বাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।