যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা দখলে ফিলিস্তিনিদের ‘বাস্তুচ্যুত’ করতে চাওয়ার প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে মিশর ও কাতারে। গাজাবাসীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দুই দেশ।
ইসরায়েলি টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘আবু আলি এক্সপ্রেস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজা পুনর্গঠনে ভিন্নরকম পরিকল্পনা আছে জানিয়ে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ‘গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকই স্বেচ্ছায় এলাকা ছাড়তে চায়, এটি কোনো গণউচ্ছেদ নয়।’
‘আমি চাইলে তাদের জন্য মিশরের রাফাহ সীমান্ত খুলে দিতে পারি, কিন্তু মিশর তাতে সায় দেবে না, বরং সঙ্গে সঙ্গে তারা সীমান্ত বন্ধ করে দেবে।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, রাফাহ সীমান্তপথকে কেন্দ্র করে নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করেছে মিশর ও কাতার।
শুক্রবার মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে “মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত দীর্ঘায়িত করা ও অস্থিতিশীলতা” বজায় রাখার প্রচেষ্টা। তিনি (নেতানিয়াহু কেবল গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় এড়াতে চাইছেন।’
ওই বিবৃতিতে মিশর স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বা চাপ প্রয়োগ করে বাস্তুচ্যুত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ধরনের পদক্ষেপ ‘যুদ্ধাপরাধের’ শামিল। এতে আরও বলা হয়, ‘এ বিষয়ে মিশরের অবস্থান “রেড লাইনের (লাল রেখা)” মতো, যা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না।’
অন্যদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের ধারাবাহিক লঙ্ঘনেরই অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দখলদার ইসরায়েলের “শাস্তি নীতি” কখনোই ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করতে পারবে না। কিংবা তাদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও সফল হবে না।’
এসময় গাজায় ধারাবাহিকভাবে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় কাতার। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের ‘চরমপন্থী ও উস্কানিমূলক নীতি’ প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক নেতাদের আহ্বান জানানো হয়।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছে মিশর ও কাতার। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি তাদের নিন্দা ও কঠোর অবস্থান গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
আল জাজিরার আম্মান প্রতিনিধি হামদাহ সালহুত বলেন, ‘নেতানিয়াহুর মন্তব্য অত্যন্ত বিতর্কিত, কারণ “ইসরায়েল নিজেই গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার নীতি” চালু করেছে।’
এর আগে গত আগস্টে গাজা শহর পুরোপুরি দখলের একটি পরিকল্পনা নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রীসভায় অনুমোদন দিয়ে বিশ্বনেতাদের নিন্দার মুখে পড়েছিল ইসরায়েল।