গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করল সরকার

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
Highlights
  • ‘গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারের পরামর্শ হচ্ছে দায় আরোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজ সংগঠনের ভেতরে নজর দেওয়া।’

দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পর্যবেক্ষণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে নোয়াবের পর্যবেক্ষণ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যানের কথা জানায়।

সেখানে বলা হয়, ‘আমরা নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি, যেখানে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী- “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতাকে ক্ষুণ্ন করেছে”; আমরা দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের গণমাধ্যম পরিচালনায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও সরকার অসাধারণ সংযম দেখিয়েছে।

টেলিভিশনের টকশো ও কলামে প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হলেও সরকার তা সেন্সর করেনি কিংবা প্রতিশোধ নেয়নি; উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।

এমনকি প্রচণ্ড প্ররোচনার মুখেও সরকার কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি, লাইসেন্স বাতিল করেনি, বরং পূর্ববর্তী সরকারের জোর করে বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে আবার প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রেস উইং।

বিবৃতিতে বলা হয়, যার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সীমিত যোগাযোগের অভিযোগের বিপরীতে প্রেস উইং বলছে, সাংবাদিকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যম বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি।

প্রেস উইং বলছে, ‘আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন।’

বিবৃতিতে সচিবালয় অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ায় সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয়। আগের ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে আপসকৃত উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আগে যেখানে অ্যাক্রেডিটেশন এমন অনেক ব্যক্তির হাতে পৌঁছেছিল যাদের বৈধ সাংবাদিকতায় কোনো ভূমিকা ছিল না; তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন রাজনীতিবিদ, কেউ তদবিরবাজ, আর কেউ সুযোগসন্ধানী, যারা বিশেষ প্রাধিকার ব্যবহার করে অন্যায্যভাবে নীতিনির্ধারণ প্রভাবিত করত।’

‘আমরা সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।’

চাকরি হারানো সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছেন, ‘এগুলো কোনো সরকারি নির্দেশে নয়; বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা ব্যবসায়িক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফল। এগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, সরকারের কোনো চাপ নয়।‘

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার দেশের সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যৌথভাবে ভাগাভাগি হওয়া উচিত।’

‘নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন “সাংবাদিক সুরক্ষা আইন” প্রস্তাব করেছে, যা আইনগত সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং সরকারি বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে সৃষ্ট আত্মনিয়ন্ত্রণ কমাবে। সরকার প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারের পরামর্শ হচ্ছে দায় আরোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজ সংগঠনের ভেতরে নজর দেওয়া। বিশেষ করে সাংবাদিকদের মজুরি বঞ্চনা, শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহিষ্ণু কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে নোয়াবের উচিত তাদের নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’

দেশের সংবেদনশীল উত্তরণকালে পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপহীন নীতি বজায় রেখেছে উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, ‘যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি “স্লোগান” নয়; এটি আমাদের জীবনাচরণের নীতি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং সঠিক পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হতো, তাহলে  সেগুলো আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সামগ্রিক অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না; বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *