খোলা মাঠে ভোট ও নির্বাচনে ভোটার নয় এমন শিক্ষার্থীদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাচনী দায়িত্বে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। বৈঠকে নয় দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরে এবি পার্টি।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদও খোলা মাঠে ভোটগ্রহণ করার কথা বলেছিলেন।
বৈঠক শেষে মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, ভোটকেন্দ্র মাঠে না করে উন্মুক্ত স্থানে করা যায় কিনা। খোলামেলা থাকলে ভোট চুরি হবে না। খোলা মাঠে হলে সাংবাদিকসহ অন্যদের মনিটরিং সহজ হবে।‘
`আর আমরা মনে করছি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা আছে পুলিশ, আনসারসহ অন্যরা তা মোকাবেলা নাও করতে পারেন। এ জন্য প্রস্তাব করেছি স্কুল ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত করার। পুলিশ, আর্মির পাশাপাশি যারা ভোটার না, যারা গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা রেখেছেন; ছাত্রীসহ তাদের কথা বলেছি। সিইসি এপ্রিসিয়েট করেছেন। তিনি বলেছেন খুবই ভালো আইডিয়া।’
ভোটের দায়িত্বে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পরেও আমরা দেখেছি কিশোরদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আমরা বলেছি পাইলট করে এক্সিকিউট করতে। আমরা বলব না যে থ্রেট এনালাইসিস না করে এটা করেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু ভোট করার জন্য নয় ভোটারকে কেন্দ্রে আনাও ইসির দায়িত্ব। তাই ইসির কাছে তাদের আনতে প্রস্তাব করছি।’
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় কাটছাঁট করা, পোস্টার নিষিদ্ধ করে ইসিই সবার জন্য তা ছাপানোর ব্যবস্থা করতে পারে কিনা; এমন মতামতও দিয়েছে এবি পার্টি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আনা, পোলিং এজেন্টদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রার্থীরা অনেক ব্যয় করেন। এগুলোর ব্যবস্থা যদি ইসি করে, প্রার্থীর খরচ কমে যাবে৷ তখন আর মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।’
দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা কথা বলেছি। একই সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকরা যেন প্রার্থী হতে পারে সে দাবী করেছি৷ কেননা, দ্বৈত নাগরিকরা বিচারক হচ্ছেন। আমাদের উপদেষ্টা পরিষদেও আছেন। দ্বৈত নাগরিকরা প্রার্থী হলে আমরা ভাল সংসদ সদস্য পাবো।’
উচ্চকক্ষে পিআর না হলে বিদ্যমান সংসদ ব্যবস্থা চায় এবি পার্টি। দলের প্রধান বলেন, ‘আমরা একটা পার্লামেন্টই কার্যকর করতে পারিনি। তাই পার্লামেন্টের দুইটা হাউজের বিরোধিতা করেছি। এখন যেহেতু সবাই বলছে, তাই আমরা মত দিয়েছি। তবে আমরা আপার হাউজে পিআর চেয়েছি। এটা না হলে দুইটা হাউজের প্রস্তাবটার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেব। এ ছাড়া পাশাপাশি আমরা ২০০ আসনে বর্তমান পদ্ধতি বাকি ১০০ আসনে পিআর হতে পারে এমন বলেছি।’
‘ইসিকে বলেছি ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দার না হোন। কি কি ভাবে কারচুপি হয় তা আমরা তুলে ধরেছি। এজন্য কঠোর হতে বলেছি এবং প্রচারের জন্য বলেছি। তারা শক্ত অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছে।’
ভোট নিয়ে সংশয়ের বিষয়ে এই নেতা আরো বলেন, ‘সরকারের প্রধান বলেছে ভোট হবে, সিইসি বলেছেন ভোট হবে, দলগুলোর অনেকে বলছে ভোট হবে; এখন যারা বলছে ভোট হবে না, তাদের কনসার্ন একটু গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে তাদের কনসার্ন পূরণ করেই ভোট এই সময়ের করা সম্ভব। বিচার, জুলাই সনদ এগুলো সম্ভব৷ তবে এগুলো না হলে ভোট হতে দেওয়া যাবে না এটাতে আমরা বিশ্বাসী না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সিইসিকে বলেছি আপনারা যদি ট্রাডিশনাল (গতানুগতিক) ইলেকশান করার চিন্তা করেন, তাহলে আপনারা ১৪০০ মানুষের (শহীদের) জীবন এবং হাজার হাজার মানুষের রক্তের জন্য দায়ী থাকবেন। আপনাদের একটি রেভ্যুলেশনারি নির্বাচন করার প্ল্যান করতে হবে। নতুন ধাচের নির্বাচনের চিন্তা করতে হবে। ট্রেডিশনাল জায়গায় যাবেন না। নতুন করে বিষয়গুলোকে ভাবেন।’
বৈঠকে দলটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা মিলি, সানী আব্দুল হক, যুবপার্টির সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, মহানগর উত্তরের আহবায়ক সেলিম খান, সদস্যসচিব সামিউল ইসলাম সবুজ, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) শাহজাহান ব্যাপারী, কেন্দ্রীয় নেতা আবু রাইয়ান রছি, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, দক্ষিণের সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান, নারী নেত্রী ইসরাত জাহান, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।