২০২৬ সালের বিশ্বকাপে এশিয়ার দুই নবাগত প্রতিনিধি, উল্লাসে ভাসছে উজবেক ও জর্ডানিয়ান ভক্তরা
বিশ্বকাপ ফুটবলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলো উজবেকিস্তান ও জর্ডান। এই দুই এশীয় দেশ ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিলো ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে, যা অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয়।
বৃহস্পতিবার নিজেদের ম্যাচ শেষে নিশ্চিত হলো তাদের জায়গা। এই দুই দল নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯টি দেশ কোয়ালিফাই করেছে। স্বাগতিক তিন দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো) ছাড়াও এর আগে জাপান, ইরান, নিউজিল্যান্ড এবং আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করেছে তাদের অংশগ্রহণ।
উজবেকিস্তানের স্বপ্ন পূরণ
আবু ধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ০-০ গোলের ড্রই যথেষ্ট ছিল উজবেকিস্তানের জন্য। দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, হতাশা আর বারবার ব্যর্থতার পর অবশেষে বিশ্বকাপে পা রাখতে পারলো মধ্য এশিয়ার এই দেশটি।
১৯৯২ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল উজবেকিস্তান, আর ১৯৯৪ সালে তারা ফিফার সদস্যপদ পায়। ৫৭তম র্যাঙ্কধারী এই দেশটি ২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিল। বাহরাইনের বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচে এক বিতর্কিত রেফারিং সিদ্ধান্তে ফিফা প্রথম লেগ পুনরায় খেলার নির্দেশ দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের বিদায়ে রূপ নেয়।
এরপর নিয়মিতভাবে এএফসি এশিয়ান কাপে ভালো করেছে তারা। ২০১১ সালে সেমিফাইনাল ও সর্বশেষ আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। এবার তারা নিজেকে প্রমাণ করলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চে।
জর্ডানের ঐতিহাসিক অর্জন
অন্যদিকে, ওমানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো জর্ডান। র্যাঙ্কিংয়ে তারা বর্তমানে ৬২ নম্বরে, আর বিশ্বকাপে কোয়ালিফাইয়ের স্বপ্ন তারা দেখে আসছিল ১৯৮৬ সাল থেকে।
২০১৪ সালে তারা সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিল, যখন ইন্টারকনটিনেন্টাল প্লে-অফে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরে যায়। এবার আর সেই হতাশার গল্প নেই—জর্ডান অবশেষে জায়গা করে নিলো বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসরে।
এশিয়ান কাপে সম্প্রতি ভালো করায় তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। সর্বশেষ আসরে রানার্সআপ হওয়া জর্ডান প্রমাণ করেছে, তারা এখন আর ‘আন্ডারডগ’ নয়। সংগঠিত দল, টেকনিক্যাল ফুটবল এবং চাপ সামলানোর ক্ষমতা—সব মিলিয়ে এবার তারা প্রস্তুত।
এশিয়ার নতুন শক্তির উত্থান
২০২৬ সালের বিশ্বকাপে ৪৮টি দল অংশ নিচ্ছে, তাই এশিয়ার জন্য সুযোগ বেড়েছে। তবে উজবেকিস্তান ও জর্ডানের মতো দলগুলো এই সুযোগকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
তাদের এই অর্জন কেবল একটি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ নয়—এটি একটি জাতীয় গর্ব, তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, এবং বিশ্বমঞ্চে নিজেদের পরিচয় জানানোর মুহূর্ত।
এখন শুরু হয়েছে প্রস্তুতির পর্ব। উত্তেজনায় ভরা উত্তর আমেরিকায় প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছে উজবেকিস্তান ও জর্ডান—যেখানে তারা চাইবে শুধু অংশগ্রহণ নয়, স্মরণীয় কিছু করে দেখাতে।