কোনো বিদেশি প্রতিনিধির সফর সাধারণত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার জন্য একটি রুটিন বিষয় হিসেবে দেখা হয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের সফরের আগে কূটনীতিকরা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় নানা গোপন তৎপরতা করে থাকেন।
এছাড়া যখন সফররত প্রতিনিধির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তখন এটি একটি সংকেত দেয় যে, সফরটি শুধুমাত্র দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর গুরুত্ব তারচেয়ে অনেক বেশি কিছু।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) – এই তিনটি প্রধান দলের সঙ্গে করা বৈঠকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঢাকা ও ইসলামাবাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভারতপন্থী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেই সম্ভব হয়েছে এটি।

সফরের দ্বিতীয় দিনে ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াত প্রধান শফিকুর রহমানের বাসায় সরাসরি তাদের সাথে বৈঠক করেন, যা এ দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক তৈরির গুরুত্বকে প্রকাশ করে।
রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা টাইমস অব বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলছেন, ইসহাকের সফরের দু’দিন আগে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সফরও ইংগিতপূর্ণ। এটিকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা উচিৎ নয়।
‘আসলে তারা (পাকিস্তান) শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে হারানো দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক পুনরুদ্ধারে খুবই সচেতন। আর পরিবর্তিত সময়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী,’ বলেন এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের মতে, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করে। সব দলই এ বৈঠকে সম্মত হয়, তবে পাকিস্তান হাই কমিশনে বসে বৈঠক করাকে মোটেই ‘সন্মানজনক’ মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
‘তারা এসব বৈঠক দলীয় কার্যালয়ে বা হোটেলে আয়োজন করতে পারতেন”, অভিমত ওই বিশ্লেষকের।
হাসিনা শাসনের সময় বাংলাদেশ ছিল ভারতপন্থী ছিল। ভারতও নিজেদের স্বার্থে দুইদেশের সম্পর্ক উন্নত করেছিল। এছাড়া বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি ভারতের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের ওপর প্রভাব গোপন কোনো ব্যাপার ছিল না।

‘আমরা একই রকম রাজনৈতিক সম্পর্ক আর চাই না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে এ নিয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে, অন্য কারো খবরদারীকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না,’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক।
বৈঠকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তোলা হলেও পাকিস্তানি পক্ষ তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পরিবর্তে, তারা চলমান সংস্কারের ও আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলগুলোর অবস্থান জানাতে আগ্রহী ছিল, এমন মনোভাবের কথা দলগুলোই জানিয়েছে।
পাক উপ-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে অংশ নেওয়া এনসিপির এক নেতা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘তারা (পাকিস্তান) বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যের বিষয়ে জানতে চেয়েছে এবং এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়েও আলাপ হয়েছে।’
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা আছে।