ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত: সিপিজে

4 Min Read
রয়টার্সের সাংবাদিক হুসাম আল-মাসরির মরদেহ নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা। ছবি: রয়টার্স
Highlights
  • ইসরায়েলি দৈনিক হাইয়োমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালের ছাদে একটি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে সেটিকে হামাসের নজরদারি যন্ত্র ভেবে আঘাত হানে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই হামলায় সাংবাদিকেরা প্রাণ হারান।

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় দুই শতাধিক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিম তীর, ইসরায়েল ও লেবাননে অন্তত ২০১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

১৯৯২ সালে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে কাজ শুরু করে সিপিজে। এরপর থেকে সাংবাদিকদের জন্য এটি ‘সবচেয়ে ভয়াবহ সময়’ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

সিপিজের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে ১৯৯ জন ইসরায়েলি হামলা ও অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে। তাদের মধ্যে গাজায় ১৯৩ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং লেবাননে ছয়জন লেবানিজ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল সীমান্তে হামাসের হাতে নিহত হয়েছেন দুইজন ইসরায়েলি সাংবাদিক। সিপিজে’র পরিসংখ্যান বলছে, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ১৫২ জন সাংবাদিক। নিখোঁজ আছেন দুইজন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯২ জন।

আরও অনেক সাংবাদিককে হামলা, সাইবার আক্রমণ, সেন্সরশিপসহ তাদের পরিবারকে লক্ষ্য করে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে সিপিজে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের ওপর এ দমনপীড়ন স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করছে। এতে গাজায় ‘গণহত্যা’ সংগঠনের দাবি জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ নথিভুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ‘ইসরায়েল প্রকাশ্যে সাংবাদিক হত্যা করছে। অথচ বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে এবং সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড এখনই থামাতে হবে। দায়ীদের আর বিনা শাস্তিতে ছাড় দেওয়া যাবে না।’

নিহত ফোটো সাংবাদিক মরিয়ম দাগার রক্তমাখা ক্যামেরা। ছবি: এপি/ইউএনবি

সম্প্রতি গাজার আল-নাসের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা সংস্থাগুলো নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওই হামলার সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং আল জাজিরার সাংবাদিকেরা সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন।

ইসরায়েলি দৈনিক হাইয়োমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালের ছাদে একটি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে সেটিকে হামাসের নজরদারি যন্ত্র ভেবে আঘাত হানে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই হামলায় সাংবাদিকেরা প্রাণ হারান।

বর্ষীয়ান যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিক জ্যানিন দি জিওভানি বলেন, ‘আমি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বসনিয়া, সিরিয়া ও ইরাকের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করেছি। কিন্তু গাজায় যা ঘটছে, তার সাথে কোনো কিছুরই তুলনা করা যায় না। যদি ইসরায়েলকে গাজায় সাংবাদিক হত্যার দায় থেকে ছাড় দেওয়া হয়, তবে তা বিশ্বব্যাপী এমন ভয়াবহ বার্তা দেবে— কোথাও আর কেউ নিরাপদ নয়।’

নিহত সাংবাদিক মরিয়ম আবু দাগার জানাজা পড়াচ্ছেন বাবা রিয়াদ দাগা। ছবি: এপি/ইউএনবি

আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন (আইএফজে) দাবি করেছে, গাজায় সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের সুরক্ষায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সংস্থাটির তথ্যমতে, গাজায় সাংবাদিকের প্রাণহানির সংখ্যা সিপিজের হিসাবের চেয়েও বেশি। আইএফজে’র দাবি, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৩৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২১৯ জনই ফিলিস্তিনি।

এদিকে সিপিজে বলছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও, একইভাবে দমননীতির শিকার হচ্ছেন অন্য দেশের সাংবাদিকরাও। কিরগিজস্তানে ‘ক্লুপ’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের দুই সাংবাদিককে মিথ্যা অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেলারুশে এক সাংবাদিককে ‘চরমপন্থা’ অভিযোগে চার বছরের জেল এবং আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। আফ্রিকার দেশ নাইজারে প্রধানমন্ত্রীকে মানহানির অভিযোগে এক সাংবাদিকের বিচার চলমান। আফগানিস্তানে তালেবান অনৈতিকতার অভিযোগে বিভিন্ন প্রদেশে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কম্বোডিয়ায় দুই সাংবাদিক রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বিচারাধীন এবং লেবাননে গণমাধ্যম আইন সংশোধনের খসড়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *