ইসরায়েল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই। যুদ্ধের নবম দিনে শনিবার ভোরে ইরান মধ্য ইসরায়েলের হোলোন শহরের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে সেখানে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
আল জাজিরার ব্রেকিং নিউজে বলা হয়, এর পরপরই ইসরায়েল ইরানের ইসফাহান অঞ্চলে বিমান হামলা চালায়, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের এই আগ্রাসনে যুক্ত হয়, তাহলে তা হবে সকলের জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক।’
তিনি বলেন, ‘ইরান যুদ্ধ চায় না, তবে আক্রমণ হলে প্রতিরোধের অধিকার রাখে।’
অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের কুদস ফোর্সের এক গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার বেনহাম শরিয়ারিকে তেহরানের একটি গাড়িতে টার্গেট করে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য, শরিয়ারি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন এবং হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়েমেনের হুথিদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট সরবরাহ করতেন।
এর আগে তারা কুম প্রদেশে কুদস ফোর্সের আরেক শীর্ষ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছিল। তবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব দাবি স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান কোনটিই করেনি।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিশ্লেষণে দোহার গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মোহানাদ সেলুম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ইসরায়েল এগিয়ে থাকলেও, ইরানের কৌশলগত ধৈর্য এবং পরিসরের কারণে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে তেহরান সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইরান ৭০ গুণ বড় দেশ। তারা অনেক আঘাত সহ্য করতে পারে এবং এমন অস্ত্র রয়েছে, যা ইসরায়েলের জন্য বাস্তব হুমকি। ইসরায়েলের পক্ষে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, নাগরিকরা বাংকারে অবস্থান করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ঘোষিত না হলেও দুই পক্ষই অস্ত্র ব্যবহারের মাত্রা ও গতিতে বাড়তি আগ্রাসন দেখাচ্ছে। এটি এক সংকটময় মুহূর্ত।’
বিশ্লেষকের মতে, ইরান ৪০ বছর ধরে এক ধরনের ‘জরুরি অবস্থায়’ আছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, সিরিয়া ও লেবাননে সক্রিয় মিলিশিয়া, ভিন্নধর্মী অর্থনীতি—সবকিছু মিলিয়ে তারা প্রস্তুত ও সহনশীল।
অন্যদিকে, ইসরায়েল একটি গণতান্ত্রিক অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় আবদ্ধ, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হবে।
এরই মধ্যে জাতিসংঘে চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ একাধিক সদস্য দেশ উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে, এই সংঘাত যদি আরো বিস্তৃত হয়, তবে তা গোটা অঞ্চলে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা থাকলেও উভয় পক্ষের অবস্থান এখনো কঠোর। সংঘর্ষের বর্তমান গতিপ্রবাহ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা এখনো দৃশ্যমান নয়।