ইসরায়েল ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে বলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ নিশ্চিত করেছে।
সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ঘটনাটি গভীর উদ্বেগজনক। আমরা তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করছি এবং ইরানি কর্তৃপক্ষ ও আমাদের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তার দেশ ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে চালানো এই হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের সম্ভাবনা তীব্রতর হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০’র ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এটিই ইরানের উপর সবচেয়ে বড় সামরিক আক্রমণ।
হামলায় দেশব্যাপী একাধিক স্থাপনায় আঘাত হানার পাশাপাশি নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর আশপাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে এক শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং গার্ড বাহিনীর আরেক সিনিয়র কর্মকর্তারও মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই হামলা এমন এক সময় হলো যখন ইরান দ্রুত পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আলোচনা থমকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয় এবং তাদের স্বার্থের উপর কোনো প্রতিশোধমূলক হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
নেতানিয়াহু এই অভিযানে নিজেকে ‘জাতির নিরাপত্তার রক্ষক’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরাতে একটি কৌশলও হতে পারে। যদিও ইসরায়েলি বিরোধী নেতা ইয়ায়ির লাপিদ নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচক হলেও ইরানবিরোধী এই হামলার প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন জানান। তবে ইরান পাল্টা হামলা চালালে নেতানিয়াহুর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক সরকারি ও সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের আবাসস্থলগুলো টার্গেট করা হয়েছে। তবে নাতাঞ্জ কেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট কী ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই অভিযানে ইসরায়েলের পুরনো রিফুয়েলিং ট্যাংকার ব্যবহার করতে হয়, যা দেশটির সামরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইরাকি আকাশসীমায় যুদ্ধবিমান দেখা গেছে, ফলে ইসরায়েল ইরানে সরাসরি ঢুকেছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
একই সময়, জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা আইএইএর বোর্ড ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো ইরানকে তিরস্কার করে। এর জবাবে ইরান জানায়, তারা আরও একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র স্থাপন করবে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসাবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করেছেন, এই হামলার পরপরই ইরানের পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশই তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে থাকাকালে এই বিস্ফোরণ ঘটে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি ইসরায়েলকে বলেছিলেন যেন আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, হামলার সম্ভাবনা ছিল।