রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরাসরি বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় রোববার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, জেলেনস্কি চাইলে যুদ্ধ ‘প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই’ শেষ করতে পারেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ করতে পারেন, অথবা চাইলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখো এটা কীভাবে শুরু হয়েছিল। ওবামা ১২ বছর আগে গুলি ছাড়াই ক্রিমিয়া রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়েছিল। আর ইউক্রেন কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না!’
ট্রাম্পের এই বক্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন সোমবার ওয়াশিংটনে যুদ্ধ বন্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। লক্ষ্য- ইউক্রেনের অবস্থানকে কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা।
রোববার ইউরোপীয় নেতারা পৃথক একটি বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সোমবারের বৈঠকে অংশ নেবেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য, যেন ইউক্রেন আবারও ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমালোচনার মুখোমুখি না হয়।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছে একটি সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব- রাশিয়া, জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে। এতে ভবিষ্যৎ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে, একইসঙ্গে রাশিয়ার ওপর কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখা যাবে বলে মনে করছেন নেতারা।
গত শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচনায় রাশিয়া ইউক্রেনের কিছু ছোট অঞ্চল ছাড়তে রাজি হতে পারে, বিনিময়ে কিয়েভকে দোনেৎস্ক পুরোপুরি মস্কোর হাতে তুলে দিতে হতে পারে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
তবে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতেই হবে। তিনি ফোনে জেলেনস্কির কাছে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দেন, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বর্তমানে দোনেৎস্কের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের বড় অংশ দখলে নিয়েছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর, ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প- পুতিন আলোচনা এবং যুদ্ধ সমাপ্তির প্রস্তাবের পর হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘রাশিয়ার অনিচ্ছা যুদ্ধবিরতির পথকে আরও জটিল করে তুলছে। যুদ্ধ বন্ধের প্রধান শর্ত হলো হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা।’