বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো ‘কিছুটা উদ্বেগ’ থাকলেও তা কেটে যাবে। আর ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলোকেও পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নজরুল ইসলাম খান সংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনও (ইসি) বলছে, ভোটের সময় অতিরিক্ত সেনা সদস্য মোতায়েনের অনুরোধ করবে সরকারকে, তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ ছাড়া ইসি যথাযথভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা মূলত আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তাদের (ইসি) প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি, সীমানা নির্ধারণের বিষয় এবং সামগ্রিক নির্বাচন বিষয়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝেছি, তারা যথাযথভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদের কিছুটা কনসার্ন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশে এখন পুলিশের ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়েছে। এটা আমরা সবাই জানি কেন হয়েছে। এর আগের সরকার তাদেরকে এমনভাবেই ব্যবহার করেছে যে তারা নিজেরাই তাদের আচরণের জন্য লজ্জিত। সেজন্যই এই দুর্বলতা। কিন্তু এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন আরো কয়েক মাস দেরি আছে। কাজেই এই সময়ের মধ্যে এটারও কিছু পরিবর্তন হবে।’
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বরেল, ‘এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যেটা বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময়ে যদি প্রয়োজন হয় তারা আরও বেশি সংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়নের ব্যাপারে তারা অনুরোধ করবে।’
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর জন্য কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনী যাতে দায়িত্ব পালন করে সে ব্যাপারে তারা সরকারকে অনুরোধ করবেন। আমরা জানি নির্বাচনকালীন সরকারকে নির্বাচন কমিশন কোনো অনুরোধ করলে সেটা রাখতে হয়। কাজেই ওই বিষয়েও আর খুব বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছি না, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোরও চেষ্টা থাকতে হবে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না হয়। যাতে আমাদের দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, আমি বিশ্বাস করি তাদের সবারই একই মনোভাব থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখি না।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে ইসি বলেছে, তারা চেষ্টা করেছে যাতে ভৌগোলিক অখণ্ডতা থাকে। যাতে জেলা ও উপজেলার অখণ্ডতা থাকে। তারা মূলনীতি ধরে অগ্রসর হয়েছে। ভোটার সংখ্যার বিষয়টাও তারা বিবেচনায় নিয়েছে।’
আমরা কোনো অভিযোগ বা আপত্তি জানাইনি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যারা তাদের আসনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আছে, তারা সেটা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সম্ভবত কাল বা পরশু তারা এটার বিষয়ে শুনানি শুরু করবেন, যোগ করেন তিনি।
না ভোটের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা না ভোটের এই প্রস্তাব কখনো করিনি। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ে এটা ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছিল। একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে, এই না ভোটের বিধানটা কার্যকর ছিল। কিন্তু না ভোট খুব একটা পড়ে না আমাদের দেশে। এটা আমাদের কারো দাবির ভিত্তিতে হয়নি।’
এই না ভোটের বিধানটা তারা অনুমোদন করেননি। ফলে এটা আইনে পরিণত হয়নি। এখন যেটা প্রস্তাব করা হচ্ছে, এটা আবার আবার একটা নতুন প্রস্তাব। এটা আমাদের প্রস্তাব না। যারা প্রস্তাব করেছেন, এ ব্যাপারে তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন ভালো হয়, যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা বলছে, ফেব্রুয়ারি তো (নির্বাচন) হবে না। সবাই রাজনীতি করেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। উনারা যদি বলেন নির্বাচন হবে তাহলে হবে, আর যদি বলেন হবে না, হবে না তাহলে তো ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা যতটুকু জানি, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারপরে কিসের ভিত্তিতে উনি বললেন, এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়।’
আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো আলোচনা আমাদের দলে এখনো হয়নি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, যারা আমরা যুগপৎ আন্দোলনে এক সঙ্গে কাজ করেছি তারা আমরা সবাই মিলে এক সঙ্গে থাকব এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা এক সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করব।’
এখানে আসন ভাগাভাগির কোন আলোচনা এখনো ফরমালি হয়নি। নির্বাচনের এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। আসন নিয়ে আলোচনা হয়তো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে। এখন এটা নিয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ নেই।
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।