আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য একযোগে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ছাড় করেছে। সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে আইএমএফ বোর্ডের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এই অর্থ ছাড়ের ফলে চলতি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রা সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একসঙ্গে দুই কিস্তি
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদি ঋণচুক্তির আওতায় এর আগে তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২.৩১ বিলিয়ন ডলার। এবার চতুর্থ রিভিউয়ের পর ১২ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একসঙ্গে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়। ২৩ জুন অর্থ ছাড়ের দিন নির্ধারণ করে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তারা চুক্তি অনুযায়ী ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বোর্ডসভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
রিজার্ভ পরিস্থিতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ‘ঋণের অর্থ রিজার্ভে যোগ হবে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে আইএমএফ কিছু সময় নেয়। বিস্তারিত আগামীকাল জানানো হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সোমবার পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬.৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক হিসাবনীতি অনুযায়ী বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুসারে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) জুন মাসের জন্য আইএমএফ নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ২০.১১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা অর্জন কঠিন বিবেচনায় সরকার গত ১২ মে এনআইআর লক্ষ্যমাত্রা ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামানোর প্রস্তাব দিলে আইএমএফ তা অনুমোদন করে।
বর্তমানে এনআইআর হিসাবে রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার। নতুন ঋণের অর্থ যুক্ত হলে তা সাড়ে ১৮ বিলিয়নে পৌঁছাবে, যা সংশোধিত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনীতির চাপ সামাল দিতে এই ঋণ সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্ধিত রিজার্ভ আমদানি ব্যয় ও মুদ্রানীতি পরিচালনায় সহায়ক হবে, যদিও দীর্ঘমেয়াদে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব পেতে হলে কাঠামোগত সংস্কার ও বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির দিকে জোর দিতে হবে।