সীমান্তের ১৬২ পথে ঢুকছে মাদক

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
Highlights
  • ৩২টি সীমান্ত জেলার ১৬২ রুট দিয়ে মাদক ঢুকে। ইয়াবা, আইস, হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা, টপেন্টাডল, এলএসডি, কোকেনসহ নানা ধরনের মাদক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ৩২ জেলার মধ্যে ভারতের সঙ্গে ২৯টি ও মিয়ানমারের সঙ্গে তিন জেলার সীমান্ত। রাঙামাটি জেলার সঙ্গে ভারত-মিয়ানমার উভয়ের সীমান্ত আছে। ৩২টি সীমান্ত দিয়ে দেশে কমবেশি মাদক ঢোকে।

মাদক উদ্ধার অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীতা রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। বিধি ভেঙে চলছে মদ-বিয়ার বাড়তি মজুত করে ‘বার’ চালানোর অভিযোগও রয়েছে। জনবল ও যানবাহনের অজুহাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কাজে গতি ও সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ।

মাদকের সহজলভ্যতার মধ্যে বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান: সবার জন্য প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও নিরাময়’।

ডিএনসির পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন্স) মো. বশির আহমেদ বলেন, সীমান্তবর্তী অনেক রুট দিয়েই মাদক প্রবেশ করছে। ডিএনসিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। কারবারিরা নিত্যনতুন কৌশলে কখনো শুকনো মরিচ, কখনো কাঁঠাল, আবার কখনো কুমড়ার ভেতরে করে মাদক পাঁচার করছে।

২০৫৫ জন জনবলের মধ্যে ১৬০০ জন ফাংশনাল জনবল রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, যোগ করেন তিনি।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের  শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয়। মাদক, সীমান্ত পথে অথবা আকাশপথে দেশে আসছে।

এই জায়গাগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেন- তাদের কেউ কেউ সুযোগ দিচ্ছেন বলেই মাদক প্রবেশ করতে পারছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করলে যেকোনো ধরনের মাদক পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, মাদকের কারণে অন্যান্য অপরাধ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।

ডিএনসির তথ্য মতে, ৩২টি সীমান্ত জেলার ১৬২ রুট দিয়ে মাদক ঢুকে। ইয়াবা, আইস, হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা, টপেন্টাডল, এলএসডি, কোকেনসহ নানা ধরনের মাদক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন ১৮টি সীমান্ত রুট দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী, মনাখালী, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, রৌমারি চর, আমতলি, পালংখালী, মরিচ্যা, রেজুখাল, নাইক্ষ্যংছড়ির গর্জনবুনিয়া ও তুমব্রু অন্যতম। রাঙামাটির রাঙ্গুনিয়ার রাজারহাট, পোমরা মালিরহাট ও চন্দ্রঘোনার খ্রিষ্টান পল্লী, খাগড়াছড়ির রামগড় ও কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা দিয়েও প্রবেশ করছে ইয়াবা। মিয়ানমারের মংডু, নাইখোংদিয়া, সিতারগোলা, সিত্তে, আললে থান খেয় অঞ্চল থেকেও আসে ইয়াবা।

২০২০ সালের পর থেকে একই রুটে ঢুকছে আইস। কক্সবাজারের ইয়াবার রুট, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত পথ দিয়ে ঢুকে হেরোইন। মিয়ানমার ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে আসে হেরোইন। আফগানিস্তানে পপি চাষ কমে যাওয়ায় মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চলে পপি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পর কক্সবাজারে হেরোইনের চালান বেড়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, দিনাজপুরের, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, নঁওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে আসে ফেন্সিডিল।

কোভিন ফসফেট মিশ্রিত ফেন্সিডিল ভারতের চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, আসাম প্রদেশের ধুবরী ও সাউথ সালমারা মানকাচর জেলা দিয়ে আসে। গাঁজা ঢোকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নঁওগা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথে।

ভারতের আসামের ধুবরী, কারিমগঞ্জ, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, ত্রিপুরার আগরতলা সীমান্ত দিয়ে আসে গাঁজা। বিদেশী মদ ঢুকে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর সীমান্ত পথে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে টপেন্টাডল নামের মাদক আসে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে।

ডিএনসির তথ্য বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সব সংস্থা মিলে ২০ কোটি ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২২১ পিস ইয়াবা, ২ হাজার ১৯৩ কেজি হেরোইন, ১৫৩ কেজি কোকেন, ২২৩ কেজি আফিম, ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫২ কেজি গাঁজা, ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৭ বোতল ও ৬৪৬ লিটার ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ পিস ইয়াবা, ৬৩ কেজি হেরোইন, ১০ কেজি কোকেন, ৮০০ গ্রাম আফিম, ৩৫ হাজার ১২১ কেজি গাঁজা, ১ লাখ ৭৫ হাজার ২২৭ পিস ও ৭৬ লিটার ফেন্সিডিল, ৬৮ হাজার ৪৬৫ বোতল ও ৫ হাজার ১১৯ লিটার বিদেশি মদ, ৮ হাজার ৫২১ ক্যান ও ৫ হাজার ৩৫৪ বোতল বিয়ার জব্দ করা হয়েছে।

১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রতি বছর ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর মূল লক্ষ্য মানব সম্প্রদায়কে মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উৎসববন্ধন, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *