সালাউদ্দিনদের ফের নির্বাচনের দরজা খোলা রাখল খসড়া গঠনতন্ত্র

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
সাবেক বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ছবি: বাফুফে

গত বছরের অক্টোবরে বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তাবিথ আউয়াল প্রথমেই বলেছিলেন, তার প্রধান কাজ হবে গঠনতন্ত্র সংস্কার। এর ঠিক দুই সপ্তাহ পর ৯ নভেম্বর প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ড. মোহাম্মদ জাকারিয়াকে। তিন মাসের মেয়াদ থাকলেও শেষ পর্যন্ত কিছুটা সময় বেশি নিয়েই সেই কমিটি একটি খসড়া দাঁড় করায়। অবশেষে গত শনিবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায় সেটিই প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয়েছে।

খসড়া গঠনতন্ত্রে বড় কোনো বিপ্লবী পরিবর্তন নেই। তবে কিছু ধারা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নির্বাহী কমিটির কোনো পদে তিন মেয়াদের বেশি থাকা যাবে না। টানা বা বিরতি দিয়ে যেভাবেই হোক, সভাপতি থেকে শুরু করে সব পদেই সর্বোচ্চ তিনবারের সীমা কার্যকর হবে।

তবে এই নিয়ম বর্তমান নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে এখনই কার্যকর হচ্ছে না। নতুন গঠনতন্ত্র পাস হলে পরবর্তী নির্বাচন থেকে মেয়াদ গণনা শুরু হবে। ফলে যারা ইতিমধ্যে তিন, চার বা পাঁচবার কমিটিতে আছেন, যেমন সত্যজিৎ দাশ রুপু, আমিরুল ইসলাম বাবু কিংবা নিজে তাবিথ আউয়াল তাদের জন্য নির্বাচনের দরজা খোলা থাকছে।

ফিফার নিয়মেও একই সীমা আছে, যদিও সেখানে সভাপতি পদে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। দুই মেয়াদ সহ-সভাপতি বা সদস্য থাকার পর কেউ সভাপতি হলে তিনি আবারও দুই মেয়াদ সভাপতি থাকতে পারেন। বাফুফের খসড়ায় সেই সুবিধা রাখা হয়নি।

নির্বাচন পদ্ধতিতেও এসেছে পরিবর্তন। এতদিন সভাপতি, সহ-সভাপতি বা সিনিয়র সহ-সভাপতি হতে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল। এখন থেকে এসব পদে নির্বাচিত হতে হলে মোট ভোটের ৫০ শতাংশ পেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১০০ বৈধ ভোটে যদি তিন প্রার্থী থাকেন এবং একজন পান ৪০, বাকিরা পান ৩৫ ও ২৫ ভোট, তবে কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হবেন না। সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া বাদ গেলে বাকি দুজনের মধ্যে আবার ভোট হবে। তবে যদি প্রথম দফাতেই কেউ ৫০ বা তার বেশি ভোট পান, তবেই তিনি নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে সাধারণ সদস্য পদে আগের মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে।

খসড়ায় বয়সসীমা নিয়েও শিথিলতা আনা হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে ২৫ বছরের নিচে বা ৭২ বছরের ওপরে কেউ প্রার্থী হতে পারতেন না। নতুন খসড়ায় এই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের মতো সিনিয়ররাও চাইলে ফের প্রার্থী হতে পারবেন।

নির্বাহী কমিটির কাঠামো অপরিবর্তিত থাকছে ২১ জনের। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার সহ-সভাপতি এবং ১৫ জন নির্বাহী সদস্য থাকবেন। তবে এবার নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে ন্যূনতম দুইজন নারী রাখার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। যদিও দুইয়ের বেশি নারী হলে তাদের ভোট কীভাবে হবে, সেটা পরিষ্কার নয়।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন কমিটির ক্ষেত্রে। এতদিন ডিসিপ্লিনারি, আপিল বা নির্বাচন কমিশন বাফুফে নির্বাহী কমিটিই গঠন করত। খসড়ায় বলা হয়েছে এসব কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নির্বাচিত হতে হবে, এবং কংগ্রেসের মাধ্যমে ১২ মাসের মধ্যে এগুলো নির্বাচন করতে হবে। এমনকি নির্বাহী কমিটির কারো আত্মীয় বা ব্যবসায়িক অংশীদারও এসব কমিটিতে থাকতে পারবেন না।

ডেলিগেট তালিকা নিয়েও এসেছে পরিবর্তন। এবার বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন বাদ পড়েছে। তবে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন আগের মতোই থাকবে। দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোও ভোটাধিকার পাচ্ছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শর্ত—এবার সরাসরি নয়, বরং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় শীর্ষ তিন দল ভোটাধিকার পাবে। বহুদিনের দাবি মেনে পাইওনিয়ার লিগকে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যদিও ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি।

খসড়া গঠনতন্ত্রে নির্বাহী কমিটির সভা বছরে তিনবারের পরিবর্তে চারবার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থী হওয়ার সময় শাস্তি, মামলা বা ক্রীড়াঙ্গনে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না সে সংক্রান্ত তথ্য জমা দেওয়ার শর্তও রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যমান নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না, কার্যকর হবে পরবর্তী নির্বাচন থেকে।

সব মিলিয়ে খসড়া গঠনতন্ত্র এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এক মাস সময় নিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা মতামত দেবেন। সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও এনএসসির সঙ্গে আলোচনা করবেন, আরেক সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ আরেফ ক্লাব ও জেলা পর্যায়ে মতামত নেবেন। সংযোজন-বিয়োজন শেষে তা ফিফার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর নির্বাহী সভায় অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যাবে সাধারণ পরিষদে। এজিএমে পাশ হলেই কার্যকর হবে বাফুফের নতুন গঠনতন্ত্র।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *