যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন করে আরোপ করা সম্পূরক শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি জানান।
চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা আগামী প্রান্তিকের মধ্যে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ শেষ করব। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক সভার জন্য দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় দেবেন। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করতে চাই যে বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
আমাদের প্রধান কর্মপন্থা হলো তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি করা। যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করছি, যা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এজেন্ডায় বাংলাদেশ পুরোপুরি সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
স্টারলিংকের বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক ছিল ৭৩৪ কোটি ডলারের। নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
শনিবার সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আরেকটি চিঠি যাবে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অফ ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ-ইউএসটিআর কার্যালয়ে, যা পাঠানো হবে বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।