রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মূল ফটকে জনসমক্ষে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে স্বেচ্ছায় এ জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, আসামি তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। এদিন একই আদালত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. টিটন গাজীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রবিনের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন রবিন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে ১৯ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর হোসেন, মনির হোসেন ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।
এদের মধ্যে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আসামি কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালুকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদলের মহানগর দক্ষিণ শাখার অধীনস্থ চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাসকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। হত্যায় অভিযুক্ত মহিন যুবদলের কোনো পদে নেই, তবে পদপ্রত্যাশী। তিনি আগে ছাত্রদল করতেন। ওই সংগঠন থেকে তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত মহিনের বিরুদ্ধে পুরোনো রাজনৈতিক মামলা আছে। তবে হত্যা বা সরাসরি বড় ধরনের অপরাধে জড়ানোর কোনো তথ্য এখনো মেলেনি। তিনি ছাত্রজীবনে থানা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। পরে যুবদল করলেও কোনো পদ ছিল না। তার মা মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মী। গ্রেপ্তার রবিনের মা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের কর্মী।
নতুন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নিথর পড়ে আছেন সোহাগ। আকাশি রঙের শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরা এক যুবক তাকে বড় পাথর দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করছেন। এর পর নীল-সাদা গেঞ্জি ও ধূসর রঙের প্যান্ট পরা আরেক যুবক পাথরটি তুলে নিয়ে আবারও আঘাত করতে থাকেন। কালো গেঞ্জি ও নীল জিন্স প্যান্ট পরা আরেকজন ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিচ্ছেন। ছবিতে মহিনকে সেখানে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। আশপাশ থেকে লোকজন এ দৃশ্য দেখলেও কেউ এগিয়ে যাননি।