বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠান রাজস্বখাতভুক্ত হলেও একমাত্র এটিই এর বাইরে। যার কারণে অবসরের পর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনও পাচ্ছেন না। ২০০৮-০৯ অর্থ বছর পর্যন্ত এফডিসি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। বছরে ৪০-৫০ কোটি টাকার উপরে লাভ করেছে। ৩৫ মি.মি. ক্যামেরার যুগে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। ২০১০ এর পর থেকে দেশে ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবসা শুরু হলে এফডিসি পিছিয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেরিতে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি আনে। ফলে ততদিনে ব্যবসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যায়। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে পড়তে থাকে। একসময় যে প্রতিষ্ঠান সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে, সেটি ২০১৫ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা নিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙ্গিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা এনে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তাছাড়া নিত্যনতুন শুটিং হাউজ ও ক্যামেরা, এডিটিং প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিএফডিসির আয় অনেক বেশি কমে গেছে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকার মত আয় হয় প্রতিষ্ঠানটির অথচ ব্যয় প্রায় দুকোটি টাকা।
২০১৮ সালে নেওয়া হয়েছিল ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স’ প্রকল্প। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আতুঁরঘর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক দূরবাস্থা উত্তরণে সহায়তা করবে—এমন ভাবনা থেকে প্রকল্পটি নেওয়া হয়।
কথা ছিলো, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে উদ্বোধন করা হবে। তবে করোনার কারণে এ সময় বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুনে নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রকল্পটির জন্য বিএফডিসির ৩ ও ৪ নং ফ্লোর ভেঙে ফেলা হয়। ৯৬ শতাংশ জায়গায় ৩ তলা বেজমেন্টসহ ১২ তলা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭ বছরেও কেনো প্রকল্প শেষ করা যায়নি?
টাইমস অব বাংলাদেশ কথা বলে বিএফডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (প্ল্যান্ট এন্ড মেশিনারিজ) মনিরুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নানা কারণেই এ প্রকল্প নির্মাণে দেরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকবার আমাদের নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এছাড়া প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন, করোনা, আর্থিক বরাদ্দ পেতে দেরিসহ বেশকিছু কারণে সময় মত নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি। তবে বর্তমানে মূল অবকাঠামোর বেজমেন্টসহ ৯ম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। আমরা প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। আশা করছি এর মধ্যেই মূল নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো।’
প্রকল্পটির প্রথম দিকে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। মনিরুজ্জামান জানান, প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি করে ৩৬৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫০ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ।
অর্ধেকের মত অগ্রগতিতে কীভাবে আগামী জুনে কাজ শেষের আশা করছেন আপনারা? উত্তরে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে বাকি কাজ করতে বেশি সময় লাগবে না।’
নির্মাণ কাজ শেষ হলে কোন ফ্লোর বিক্রি করা হবে না বলে জানান মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সরকারি বিল্ডিং তা কোনো ফ্লোর বিক্রি করা হবে না, তবে ভাড়া দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি সফলভাবে নির্মিত হলে বিএফডিসি আবার একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে। সরকার আগের মত এর থেকে রাজস্ব পাবে, কোনো প্রকার ভূর্তকি দিয়ে এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে না।’
একনজরে বিএফডিসি কমপ্লেক্স
নির্মাণ এরিয়া: ৯৬ শতাংশ
বেইজমেন্ট: ৩টি
ফ্লোর: ১২টি
প্রকল্প ব্যয়: ৩৬৫ কোটি টাকা
নির্মাণ কাজ শেষের সম্ভাব্য সময়: ৩০ জুন, ২০২৬
যা যা থাকছে কমপ্লেক্সটিতে
৫টি শুটিং ফ্লোর, ৩০০টি কার পার্কিং, এডিটিং প্ল্যানেল, ডাবিং প্ল্যানেল, আবাসিক হোটেল, অফিস, লাইব্রেরি, ফিল্ম আর্কাইভ, চলচ্চিত্র জাদুঘর, রিহার্সাল রুম, শপিং মল, সুইমিংপুল ও ব্যায়ামাগার। বিএফডিসির প্রশাসনিক কার্যক্রম এতে স্থানান্তর করা হবে। এতে থাকবে ২টি সিনেপ্লেক্স। এর মধ্যে ৩ হলের একটি, আরেকটি ২ হলের। ৩ হলেরটিতে থ্রিডি ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।