বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, পুরোনো বস্তাপচা ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই নতুন ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, ‘পুরোনো সব যদি টিকে থাকে, তাহলে কেন তারা জীবন দিল? যারা ওই বস্তাপচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার গড়তে চায়—তাদেরকে আমরা বলি জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছেন, আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন—আপনারা পারবেন না। কাজেই নতুন ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।’
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।
তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদের ও দুর্নীতির মুলোৎপাটন করে বিজয় অর্জনের আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির।
তিনি বলেন, ‘একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এই দুর্নীতির মুলোৎপাটন করার জন্য যা দরকার, আমরা তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়েও ইনশাআল্লাহ বিজয় লাভ করব।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘কঠিন অন্ধকার যুগের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যারা তিলে তিলে নির্যাতিত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, অপশক্তিকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন, যারা লড়াই করে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন—তাদের কাছে আমরা গভীরভাবে ঋণী।
জামায়াতের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে তাদের ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, এই জাতির মুক্তির জন্য বুক চেতিয়ে বুকে গুলি লুফে না নিত—তাহলে হয়তোবা আজকের বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। হয়তো আরও মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘চব্বিশে জীবনবাজি রাখা যুদ্ধটা যদি না হতো-তাহলে আজকে যারা বিভিন্ন ধরনের কথা ও দাবি দাওয়া পেশ করছেন, তারা তখন কোথায় যেত? তাদের ত্যাগকে অবজ্ঞা ও অবহেলা নয়।’
ত্যাগীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য যেন না করি। অহংকার করে অন্য দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় আমরা যেন কথা না বলি। যদি এগুলো আমরা পরিহার করতে না পারি—তাহলে বুঝতে হবে, যারা পারবেন না, ফ্যাসিবাদের রূপ তাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, আমরা এগুলো করব না। কেউ এগুলো করবে না। জাতীয় ঐক্যের বীজতলাটা আমরা একসঙ্গে তৈরি করব, ইনশাআল্লাহ।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করব, ইনশাল্লাহ। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমার লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর মেহেরবানি ও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়—তাহলে মালিক হবে না সেবক হবে ইনশাআল্লাহ। আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি—লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যদি সরকার গঠন করতে পারেন-তাহলে কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী সরকারের কাছ থেকে প্লট গ্রহণ করবে না।’
কোনো এমপি ও মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না। কোনো এমপি ও মন্ত্রী নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। যদি কোনো এমপি ও মন্ত্রী তার নির্দিষ্ট কোনো কাজের বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য থাকবেন, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।’
যুবকদের উদ্দেশে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি জামায়াতের আমির হিসেবে এখানে কথা বলতে আসিনি, আমি এসেছি বাংলাদেশের মানুষের একজন হয়ে কথা বলতে। আমি শিশুদের বন্ধু, আমি যুবকদের ভাই, আমি বয়োষ্ঠদের সহযোদ্ধা, আমার বোনদের আমি ভাই, সুতরাং আমি তাদের মুক্তির জন্যই আমি দায়িত্ব নিয়েই এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। আল্লাহর ইচ্ছা, শরীর আমাকে সাময়িক সহযোগিতা করে নাই। এখন আমাকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন এটাও আল্লাহর ইচ্ছা।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির মুক্তির জন্য আমাদের এই লড়াই নয়। রাস্তার একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা বাগানের একজন শ্রমিক, রক্ত ও ঘাম ঝড়ানো রিকশাচালক আমার একজন ভাই ও কৃষক বন্ধুদের হয়ে এখানে কথা বলতে এসেছি। আমি কোনো অভিজাত শ্রেণির হয়ে এখানে কথা বলতে আসিনি।’
জামায়াতের প্রধান বলেন, ‘সকল প্রকার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, পরোয়া করিনি। আমার আফসোস ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হলো আমি তাদের একজন হতে পারলাম না।’
ইনসাফের ভিত্তিতে একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য আগামীতে যে লড়াই হবে, সেই লড়াইয়ে নিজের অংশগ্রহণের সামর্থের জন্য দোয়াও চান তিনি।
দলের সাবেক নেতাদের হত্যা, ২০০৬ সাল থেকে সকল গণহত্যা, পল্টন গণহত্যা, শাপলা গণহত্যাসহ সারা দেশের গণহত্যা, পিলখানার গণহত্যা, চব্বিশের গণহত্যা যারা করেছে-তাদের সকলের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের দৃশ্যমাণ বিচার শুরু না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।
তিনি বলেন, শিশু, কিশোর, যুবক, শ্রমিক জনতা সবাইকে যে দেশ ও সংবিধান, রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে পারবে সেই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি শহীদ আবু সাঈদসহ অন্যান্য শহীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সমাবেশে এসে অসুস্থতাজনিত কারণে শাহ আলম নামে এক কর্মীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সমাবেশে আসার সময় ফরিদপুরের ভাঙায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান খুলনার দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ ও কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান।
এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলরা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, শহীদ পরিবারের সদস্য, ২৪’র জুলাই যোদ্ধা, শহীদ আবরারের পিতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।