ত্বক ফর্সার নামে বিষ!

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
দেশের বাজারে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে উচ্চমাত্রার পারদের উপস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত
Highlights
  • ‘ত্বক ফর্সাকারী ক্ষতিকর ক্রিম বন্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত মনিটর করছি।’

দেশের বাজারে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে উচ্চমাত্রার পারদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজার, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি বাজার, দোকান, ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে পরীক্ষিত ২৬টি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ২২টিতে পারদের মাত্রা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিরাপত্তা সীমা ১ পার্ট পার মিলিয়ন (পিপিএম) থেকে বহুগুণ বেশি রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশে পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী পণ্য বিক্রি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ইউরোপীয় এনভায়রনমেন্টাল ব্যুরো (ইইবি)-এর সহযোগিতায় এবং ফিলিপাইন ভিত্তিক সংস্থা ব্যান টক্সিকস-এর পরীক্ষামূলক সহযোগিতায় এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো এই গবেষণাটি পরিচালনা করে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স (এক্সআরএফ) মেশিন ব্যবহার করে গবেষকরা পরীক্ষিত পণ্যে অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রার মার্কারি উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। সর্বোচ্চ পারদসহ দুটি ব্র্যান্ড হলো ডিউ বিউটি ক্রিম (২৪ হাজার ৮০০ পার্ট পার মিলিয়ন) এবং গোল্ডেন পার্ল বিউটি ক্রিম (২০ হাজার ৭০০ পার্ট পার মিলিয়ন)।

গবেষণায় দেখা গেছে, পারদ শনাক্ত হওয়া ২২টি পণ্যের মধ্যে তিনটি পণ্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নিষিদ্ধ। এই তিনটির মধ্যে রয়েছে ডিউ বিউটি ক্রিম, গোল্ডেন পার্ল বিউটি ক্রিম ও গৌরি বিউটি ক্রিম। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও এসব পণ্য এখনো স্থানীয় বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও, বেশ কিছু ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে বিপজ্জনক মাত্রায় পারদ পাওয়া গেছে। এইসব পণ্যের মধ্যে পারদের পরিমাণ আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাত্রা (১ পিপিএম)-এর তুলনায় হাজার গুণ বেশি, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর উপ পরিচালক এস এম আবু সাঈদ বলেন, ‘ত্বক ফর্সাকারী ক্ষতিকর ক্রিম বন্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত মনিটর করছি। এমনকি নিষিদ্ধ ক্রিম শনাক্তে গ্রাহকের ছদ্মবেশেও বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

শুধুমাত্র বিএসটিআই-এর পক্ষে এ ধরনের কাজ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য জনসাধারণ, সংগঠন, গণমাধ্যম সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যোগ করেন তিনি।

এসডো’র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান  মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু অগ্রগতি হলেও এখনো বাজারে এসব পণ্য সহজলভ্য, এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পারদ স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। আন্তর্জাতিক জোট জিরো মার্কারি ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডএমডব্লিউজি) অনুযায়ী, পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম দীর্ঘমেয়াদে চোখ, ফুসফুস, কিডনি, হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। এসব পণ্যে থাকা পারদ শুধু ব্যবহারকারীর নয়, আশপাশের মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে শিশু, নবজাতক ও গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য।

ব্যান টক্সিকস-এর অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন অফিসার থনি ডিজন বলেছেন, ‘জোরালো সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারি এর মত আন্তর্জাতিক চুক্তির কঠোরভাবে পালন খুব জরুরি। দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে এই বিষাক্ত পণ্যের উৎপাদন, বাণিজ্য ও বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।’

এসডো’র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘পারদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার, সিভিল সোসাইটি ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে থাকা মার্কারি অনেক সময় কোনো তাৎক্ষণিক উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *