কিছুতেই কমছে না অপরাধ, ‘সরকারের প্রচেষ্টা’ নিয়ে প্রশ্ন

কামরুজ্জামান খান
3 Min Read
গত ১১ জুলাই পল্লবীতে চাঁদা না পেয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা ও গুলি ছোড়ে। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
Highlights
  • জানুয়ারিতে ৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮, মার্চে ৩৩, এপ্রিলে ২৯, মে মাসে ৩২ এবং শুধু জুনেই ৪৯টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে

গত ১০ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার উদ্যোগ নিলেও তার সুফল মেলেনি। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান এবং ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মতো বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরও সহিংসতা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ ঠেকানো সম্ভব হয়নি। যাকে ব্যর্থতা বলে স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় ‘সররকারে প্রচেষ্টা’ কেন সফল হচ্ছে না, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

পুলিশের তথ্যানুযায়ী, সংঘবদ্ধ অপরাধের মাত্রা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং সরকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আগামী দিনে অপরাধের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শুধু ঢাকায়ই ৭ হাজার ৮শ’ ২৭টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যে দেখা গেছে- সদরঘাট, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, রূপনগর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা এবং মিরপুর এলাকায় অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া ঢাকায় এখন পর্যন্ত ২১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮, মার্চে ৩৩, এপ্রিলে ২৯, মে মাসে ৩২ এবং শুধু জুনেই ৪৯টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে- যা উদ্বেগজনক।

ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতালে সামনে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা-শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে হত্যা করার মতো ঘটনাগুলোর পর জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে।  প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর অবশ্য এসব অভিযোগের বিপরীতে বলেছে, ‘এই বছরের অপরাধের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে- এমন দাবি তথ্যের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে বিষয়গুলোকে ‘‘ক্রাইম ওয়েভ’’ বলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রকৃত ভিত্তি নেই। কিছু নির্দিষ্ট অপরাধ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি স্থিতিশীল বা কমতির দিকে।’

প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান নয়, অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রশ্ন হলো- এই অপরাধগুলো জনমনে ভয় সৃষ্টি করছে কি না এবং মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখছে কি না।’

সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে ধরনের অভিযানই হোক- যৌথ অভিযান, বিশেষ অপারেশন কিংবা চিরুনি অভিযান- কোনোটিই ফল দেবে না, যদি অপরাধীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য না থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঘাটতির কারণে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না, অপরাধীরা ধরা পড়ছে না কিংবা বিচার মুখোমুখি হচ্ছে না।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ওমর ফারুক বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না থাকায় অপরাধীরা এটিকে ‘‘সুবর্ণ সুযোগ’’ হিসেবে দেখছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’

তিনি দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন, যা জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে।

তার ভাষায়, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে সক্রিয় হতে হবে, যাতে জনআস্থা অর্জিত হয়। আজকের পুলিশ এই ধরনের বিশৃঙ্খলা বা জনতা-নিয়ন্ত্রিত সহিংসতার সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি।’

এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার থেকে দেশজুড়ে ‘চিরুনি অভিযান’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই অভিযান কবে থেকে কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এর আগে সেনা নেতৃত্বাধীন ‘‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’’ শুরু করা হলেও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য মেলেনি বলে স্বীকার করছেন বিশ্লেষকরা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *