কন্তের ইতিহাস গড়া কীর্তিতে স্কুডেটো ফিরে পেল নাপোলি

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
শেষ দিনের নাটকীয়তায় সিরি-আ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে ন্যাপলসদের উল্লাস। ছবি: নাপোলি

তিন মৌসুমে দ্বিতীয়, আর ক্লাব ইতিহাসে চতুর্থ সিরি আ শিরোপা ঘরে তুলেছে নাপোলি। ২০২৪–২৫ মৌসুমের রোমাঞ্চকর শেষ দিনে কাগলিয়ারিকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত হয়েছে স্কুডেটো—আর এর মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে কোচ আন্তোনিও কন্তের ক্যারিয়ারের এক অনন্য অধ্যায়।

এদিন শিরোপার জন্য জয় দরকার ছিল নাপোলির, কারণ পয়েন্ট টেবিলে তারা ছিল ইন্টার মিলানের ঠিক এক ধাপ ওপরে। ইন্টারও নিজেদের ম্যাচে কাজ সেরে ফেলেছিল—কোমোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে রেখেছিল চাপ। কিন্তু নাপোলি নিজেদের কাজটা শেষ করেছে ঠিকঠাকভাবেই, আর সেজন্যই মৌসুম শেষে এক পয়েন্টের ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাঠ ছাড়ে নীল-সাদা দলটি।

মারাদোনার শহরে উৎসব

নাপোলির ঘরের মাঠ স্টাদিও দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনায় সেদিন ছিল এক অপূর্ব দৃশ্য। ম্যাচের ৪২ মিনিটে ম্যাটেও পোলিতানোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন স্কট ম্যাকটমিনে, যিনি মৌসুমের শুরুতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে যোগ দিয়েছিলেন ২৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোমেলু লুকাকু, যিনি চেলসি থেকে আসার পর দলটির আক্রমণে এনে দিয়েছেন ধার। মৌসুমে ১৪ গোলের পাশাপাশি ১০টি অ্যাসিস্ট—লিগের সর্বোচ্চ।

কন্টে: তিন ক্লাব, তিন শিরোপা

এই জয়ের মাধ্যমে সিরি আ-তে তিনটি ভিন্ন ক্লাবের কোচ হিসেবে শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়লেন আন্তোনিও কন্তে—একটি অর্জন যা এর আগে কোনো কোচের ছিল না। জুভেন্টাসের সঙ্গে তিনবার (২০১২, ২০১৩, ২০১৪), ইন্টারের সঙ্গে একবার (২০২১) আর এবার নাপোলির কোচ হিসেবে শিরোপা জিতলেন তিনি। ইংল্যান্ডেও রয়েছে তার এক শিরোপা—২০১৭ সালে চেলসির সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগ জয়।

ফাবিও ক্যাপেলোর মতো কিংবদন্তিরাও একাধিক ক্লাবে শিরোপা জিতলেও, জুভেন্টাসের সঙ্গে তার ২০০৫ ও ২০০৬ সালের দুটি শিরোপাই পরে ক্যালচিওপোলি কেলেঙ্কারিতে বাতিল হয়ে যায়। ফলে অফিসিয়ালি তিন ক্লাবের হয়ে সিরি আ জেতা একমাত্র কোচ এখন কন্তেই।

গত মৌসুমে যেখানে নাপোলির অবস্থান ছিল দশম, সেখানে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা প্রায় অলৌকিক বলেই মনে হতে পারে। তিন কোচ বদলে বিশৃঙ্খল মৌসুমের পর কন্টে দায়িত্ব নেন এবং প্রথম মৌসুমেই শিরোপা এনে দেন। একদিকে মাঠে শৃঙ্খলা ও কাঠামোগত ফুটবল, অন্যদিকে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে দলীয় প্রচেষ্টার ওপর জোর—এই ফর্মুলাই সফল করেছে কন্টেকে।

খভিচা খভারাতস্কেলিয়া জানুয়ারিতে পিএসজিতে চলে যান, ভিক্টর ওসিমহেন চলে যান গ্যালাতাসারেতে ধারে—তবু ছন্দ হারায়নি দলটি। মৌসুমের প্রথম ম্যাচ হারলেও পরের ৯ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতে জয়, এরপর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৭ ম্যাচ জয়ের ধারা—সব মিলিয়ে ধারাবাহিকতাই এনে দিয়েছে শিরোপা।

এবার ইউরোপিয়ান কোনও প্রতিযোগিতায় ছিল না নাপোলি, কোপা ইতালিয়াতেও বাদ পড়ে দ্রুত। তাই তুলনামূলক হালকা সূচি কাজে লাগিয়েছেন কন্তে, পুরো মৌসুমে রেখেছেন দলকে সতেজ ও লক্ষ্যাভিমুখী।

ইন্টার এখন তাকিয়ে ইউরোপে

শিরোপা হাতছাড়া হলেও ইন্টার মিলানের মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। ৩১ মে, উদিনে পিএসজির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল সামনে রেখে এগোচ্ছে তারা। মৌসুমের শুরুতে যেটি ট্রেবল হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল, সেটি এখন হয়তো ‘শুধুই’ এক ইউরোপীয় অভিযান হয়ে থাকবে।

নাপোলির সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ

আগামী মৌসুমে নাপোলির জন্য অপেক্ষা করছে চ্যাম্পিয়নস লিগ, এবং আরও বেশি পরিপক্ব দলগঠনের চ্যালেঞ্জ। স্কোয়াডের গভীরতা বাড়ানো জরুরি হবে, কারণ এবার যেটা সফল হয়েছে এক প্রতিযোগিতায় মনোযোগ দিয়ে, সেটি আবার কাজ নাও করতে পারে একাধিক প্রতিযোগিতায়।

তবে সে সব ভবিষ্যতের কথা। এখনই সময় উদযাপনের—নাপোলির শহরে, কন্তের ডাগআউটে এবং সেই ভক্তদের মনে, যারা এতদিন অপেক্ষায় ছিল আরেকটি ‘স্কুডেটো’ দেখার।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *