এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ২০২৬ সামনে রেখে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। অক্টোবর ফিফা উইন্ডোতে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাফুফে। শুধু তাই নয়, এই সফরে বিশাল বহর নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সিনিয়রদের পাশাপাশি থাকছে অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের সদস্যরাও।
আগামী ২৫ ও ২৮ অক্টোবর থাইল্যান্ডের মাটিতে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী দল। মঙ্গলবার ফেডারেশন ভবনে সাংবাদিকদের মাহফুজা আক্তার কিরণ নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি। নারী উইংয়ের প্রধানের ভাষায়, ‘অক্টোবর উইন্ডোতে থাইল্যান্ডে দুটি ম্যাচ খেলা নিশ্চিত হয়েছে। নভেম্বর উইন্ডোতে ঢাকায় ত্রিদেশীয় আয়োজনের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
শুধু ম্যাচ খেলা নয়, অক্টোবরের থাইল্যান্ড সফরের পর সরাসরি জাপানে চলে যাবে দল। সেখানে টানা তিন সপ্তাহ অনুশীলন করবে দুই স্কোয়াড। কিরণ জানালেন, ‘জাপানে কোনো ম্যাচ নয়, শুধু অনুশীলন ক্যাম্প। এরপর নভেম্বর উইন্ডোতেও দুটি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা আছে।’
বাংলাদেশ ফুটবল এখন এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী। সিনিয়রদের পথ ধরে এবার প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-২০ দলও জায়গা করে নিয়েছে নারী এশিয়ান কাপে। ফলে প্রস্তুতির গুরুত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ, অক্টোবর উইন্ডোতে থাইল্যান্ড ম্যাচের বিষয়টি কার্যত প্রথম বাস্তবায়িত পরিকল্পনা। অর্থাৎ, এশিয়ান কাপের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের মাঠে নামা শুরু হবে এখান থেকেই।
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে আরও কিছু ম্যাচ খেলার আলোচনাও চলছে। কিরণ জানান, ‘সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডে একটি ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা চলছে। সবকিছু মিলে নারী দলকে যতটা সম্ভব ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে চাই আমরা।’
নারী ফুটবলের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহও এখন বেড়েছে। একসময় যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী ছিল না অনেক দেশ, এখন র্যাংকিং উন্নতির কারণে পরিস্থিতি বদলেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ নারী দল ১০৩ নম্বরে উঠেছে এবং সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। ফিফার অফিসিয়াল রিপোর্টেও সেই অর্জনের বিশেষ উল্লেখ আছে। তবে ম্যাচের ব্যবস্থা করতে এখনও ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে জানান কিরণ। ‘আমার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সভাপতির বা সেক্রেটারির পরিচয় আছে। আগে ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলি, তারপর আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়।’
নারী এশিয়ান কাপ মিশনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরে। তবে বাফুফের নতুন কোচ পিটার আসতে আসতে সেটা কিছুটা পিছিয়েছে। এখন সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প শুরু হবে। কিরণ জানিয়েছেন, ‘প্রথমে বসুন্ধরা কিংস এর মাঠ কিংবা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন হবে। তবে বাফুফে ভবনে ক্যাম্প হবে না।’
এই প্রস্তুতিতে কয়েক কোটি টাকার বাজেট লাগবে বলে জানা গেছে। কিন্তু আর্থিক দিক নিয়ে কিরণের কোনো চিন্তা নেই। তিনি বলেন, ‘বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হবে না।’
দেশের নারী ফুটবল লিগ এখনও অনিয়মিত হলেও এ বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন কিরণ। ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া চলছে, প্রিমিয়ার ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দলগুলোকে ইতোমধ্যে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানও নারী দল গঠনে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দশ মাস কেটে গেছে। কিন্তু এখনো নারী ফুটবল কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ফলে প্রায় একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কিরণ। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট জানাতে তিনি নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানান নিজের কক্ষে।
প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-২০ দল জায়গা করে নিয়েছে নারী এশিয়ান কাপে। সিনিয়রদের সঙ্গে একসঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেলে সেটা হবে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য ঐতিহাসিক অধ্যায়।