৫ অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফাইল ছবি
Highlights
  • মামলায় শেখ হাসিনাকে ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গণহত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। তাদের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলার পাঁচটি ধারাকে আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। মামলার তিন অভিযুক্তের মধ্যে বর্তমানে গ্রেপ্তারে রয়েছেন শুধু চৌধুরী মামুন।

রোববার বেলা ১২টার দিকে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র যাচাই করে মামলার বিচার গ্রহণের উপযুক্ততা বিবেচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আমলে নেয় এবং দুজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। মামলাটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রথম কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচারিক প্রক্রিয়ার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করে। এই প্রথম কোনো বিচারিক কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়।

এর আগে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজের একাংশ ২০২৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার পটভূমিতে ব্যাপক ধরপাকড়, নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানালেও তা আইনি পর্যায়ে গড়ায়নি।

চিফ প্রসিকিউটর অভিযোগ করে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্তরা ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে’ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন।

মামলায় শেখ হাসিনাকে ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গণহত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। তাদের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘আসামিরা জুলাই বিপ্লবের মুক্তিকামী জনতাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আসামিরা ক্ষমতায় টিকে থাকার উদগ্র বাসনায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চূড়ান্ত ব্যবহার করে ছাত্র আন্দোলনে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতা চালান।’

‘আমরা বিচার শুরু করছি, এই বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সংগঠিত অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য। জুলাই বিপ্লবে নিরস্ত্র নিরীহ সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে তরুণ, ছাত্র, যুবা, নারী ও শিশু রাজপথে নেমে এসেছিলেন–তারা একটি ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য, বৈষম্য নামক কু-প্রথা অবসানের দাবিতে অহিংস ও ন্যায়সংগত আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন।’

চিফ প্রসিকিউটর জানান, অভিযোগের সপক্ষে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, আসামিদের অডিও ক্লিপিংসহ মোট দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র দাখিল করা হয়েছে।

গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *