‘সাদাপাথরের’ স্বচ্ছপানি আবারও মুখর পর্যটকে

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
‘সাদাপাথর’ পর্যটনকেন্দ্রে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের ভিড়। ছবি: টাইমস

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাগঞ্জের ‘সাদাপাথর’ পর্যটনকেন্দ্রে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের ভিড়। পাথর লুটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিপর্যস্ত এলাকা এখন প্রশাসনিক উদ্যোগে ধীরে ধীরে আগের রূপ ফিরে পাচ্ছে।

লুট হওয়া সাদা পাথর বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে নদীপাড়ে পুনঃস্থাপন শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিদিনই শ্রমিকেরা নৌকায় পাথর এনে খালি জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছেন। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় দিনে অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যটক ভিড় করছেন সেখানে। আর শুক্রবার ছুটির দিনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় আট থেকে নয় হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে।

পর্যটকেরা বলছেন, আগের তুলনায় পাথরের পরিমাণ কম হলেও প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝেও।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, আগের মতো সপ্তাহান্তে ১২ থেকে ১৪ হাজার পর্যটক এলে আয়-রোজগারে গতি ফিরবে। তবে এর আগে গত দুই সপ্তাহ সাদাপাথরে পর্যটক ছিল না বললেই চলে। এখন আবার ভিড় বাড়ছে, সেই সঙ্গে ফিরছে আস্থা।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পাথর লুটের ঘটনায় এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কিছু পাথর উদ্ধার করে তা সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ২৫ আগস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে যার কাছে লুট হওয়া সাদা পাথর আছে, তাকে নিজ দায়িত্বে তা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদারকি করছেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও। ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, কোথায় কোথায় পাথর লুকানো আছে, সে তথ্য জানাতে।

সাদাপাথর পরিদর্শনে এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখানে যা ঘটেছে, তা লুট নয়- হরিলুট। বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই এত বড় লুটপাট ঘটেছে- এতে বিজিবি দায় এড়াতে পারে না।’

সিলেটের ভোলাগঞ্জে নির্বিচারে লুট হয়েছে সাদা পাথর। ছবি: সরকার মাজহারুল মান্নান/টাইমস

এ সময় তিনি সাদাপাথর এলাকা ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপ-কমিশনারকে (ভূমি)  সরিয়ে দিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানান।

নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘সাদাপাথর তার পুরোনো রূপ ফিরে পাচ্ছে- এটা বড় স্বস্তির খবর। পর্যটকদের বিশ্বাস ফিরছে, আর পর্যটনবান্ধব সব সুবিধা দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

‘পাথর পুনঃস্থাপনের কাজ স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় আরও এগিয়ে যাবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাথর ফেরত না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’,  হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘শুধু পাথর ফেলে হয়তো পুরোপুরি আগের সৌন্দর্য ফিরবে না, তবে যতটা ক্ষতি হয়েছে, তার কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা চলছে।’

ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রটি পিয়াইন ও ধলাই নদীর বুকচিরে গড়ে উঠেছে। ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা এই এলাকাটি কাচের মতো স্বচ্ছ পানি ও সাদা পাথরের জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পট পরিবর্তনের পর গত একবছর ধরে সেখানে প্রকাশ্যে চলে পাথর লুটপাট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে। পাশাপাশি জাফলং ও জৈন্তাপুর পর্যটন এলাকার পাথর ও বালুও লুট হয়ে গেছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *