সাতক্ষীরায় অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহী কৃষকরা

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
মৎস্য ঘেরের বেড়িতে ঝুলছে তরমুজ। ছবি: টাইমস

স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এবং ভালো ফলনের কারণে সাতক্ষীরায় অসময়ে তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। মৎস্য ঘেরের বেড়িতে মাচা পদ্ধতিতে ও কৃষি জমিতে সবজি চাষের পাশাপাশি তরমুজ চাষ হচ্ছে। এতে কৃষকের উপার্জনের নতুন পথ তৈরির পাশাপাশি দেশে তরমুজের চাহিদা মিটছে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ৭৬ হেক্টর জমিতে অসময়ের এই তরমুজ চাষ হয়েছে।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানা যায়, এই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৫০ জন কৃষককে তরমুজের বীজ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে উন্নত জাতের সুপ্রিম হানি (হলুদ), তৃপ্তি (হলুদ), ব্লাক বেবি (কালো), সুগারকুইন ও বাংলা লিংক রয়েছে। অসময়ের এই তরমুজ চাষের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। মৎস্য ঘেরের বেড়িতে খুব সহজে এটা চাষ করা যায়। অল্পদিনে বেশ ভালো মুনাফা হওয়ায় প্রতিবছর ফলটি চাষের পরিমাণ বাড়ছে।  লাভের মুখ দেখায় প্রতিবছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর এ উপজেলার ৩টি প্রদর্শনী খামারে ইতোমধ্যে ফলটির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০  গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম বীজ রোপণ করা যায়। অসময়ের এই তরমুজ বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মৎস্যচাষিরাও মাছের পাশাপাশি তাদের ঘেরের বেড়িতে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

তরমুজ হাতে কিছু কৃষক। ছবি: টাইমস

উপজেলার টিকেট গ্রামের তরমুজ চাষি বিশ্বনাথ টাপালী জানান, তিনি জুনের শেষ সপ্তাহে তার ৫ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেড়িতে এ বছরই প্রথম হলুদ রঙের তরমুজ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাচা তৈরির জন্য টাকাও দেওয়া হয়েছে। তার নিজের খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি ইতোমধ্যে এক লাখ টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করেছেন। মিষ্টি পানিতে ফসল ফলানোর চেয়ে লোনা পানিতে অনবরত বালতিতে টিউবওয়েলের পানি বয়ে নিয়ে পরিচর্যা করে ফসল ফলানো খুবই কষ্টকর। রোগ-বালাই পোকা-মাকড় দমনের দিকেও নজর রাখতে হয়। সে হিসেবে এখনো দুইবার ভালো ফল তোলা যাবে।

শশাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, ৪০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেড়িতে তরমুজ চাষ করতে তার মোট ৫৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এই তরমুজ দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি খেতেও অনেক মিষ্টি। বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে।’

তরমুজের বাম্পার ফলন। ছবি: টাইমস

দেবহাটার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান জানান, মাঠ পর্যায়ে প্রথমে এই তরমুজ চাষের আগ্রহ না থাকলেও এখন চাষিরা এ নিয়ে বেশ উৎসাহী। অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় চাষীদের এ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহের অন্যতম আরও দু’টি কারণ হলো- সাতক্ষীরার মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী এবং মাত্র দুই মাসে এটি বিক্রির উপযোগী হয়।

মৎস্য ঘেরের বেড়ি ও পতিত জমি কৃষির আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষি অফিস, যাতে দেশের উর্বর জমি ব্যবহার করে ফসল ফলিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে পারেন কৃষকরা। এ ছাড়া, তরুণরাও চাকরির পেছনে বৃথা সময় নষ্ট না করে এ কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

আগে মাছের ঘেরের বেড়িতে চাষ করা যেত না।  কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ওই জমিগুলো চাষের উপযোগী করা হয়েছে এবং সেখান থেকে বীজ, সার সরবরাহ ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কোনো ভূমি যাতে না পড়ে থাকে সে জন্য কৃষি দপ্তর থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসার বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার ৭ উপজেলায় এই তরমুজ এবার ৭৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৪ হেক্টর বেশি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *